হাসান ইমন

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

ধূপখোলা মাঠ নিয়ে নান্দনিক পরিকল্পনা

মাঠে প্রবেশের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৭৬২ বর্গফুটের তিনটি গেট থাকবে। ৭ হাজার ৭৩০ বর্গফুটের একটি বাস্কেটবল কোর্ট ও ৩৩ হাজার ৪৬৩ বর্গফুটের সবুজ এলাকা থাকবে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে প্লে-জোন

ধূপখোলা মাঠ নিয়ে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উন্নত বিশ্বের বড় মাঠ ও পার্কের আদলে গড়ে তোলার চিন্তা আছে সংস্থাটির। এখানে ফুটবল খেলার মাঠ, বিনোদন কর্নার, গাড়ি পার্কিং স্থানসহ পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে নকশা তৈরি হয়েছে। শুরু হয়েছে নির্মাণকাজও। এক বছরের মধ্যে যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ৩০ হাজার ২১০ বর্গমিটার আয়তনের মাঠটিকে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মাঠে ফুটবল খেলার সব আয়োজনের পাশাপাশি বহুমুখী ভবন, বিনোদন কর্নার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট, নেট ক্রিকেট, ওয়াকওয়ে, কফিহাউস, ফুড কোর্ট, গ্রিন জোন, বাগান, ওয়াটার বডি, এলইডি লাইটিং, পার্কিং জোনসহ আরো কিছু আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

ডিএসসিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ৩৯৪টি দোকান এক জায়গায় নিয়ে আসা হবে। এর জন্য মাঠের এক পাশে প্রায় ৬২ শতাংশ জমিতে পাঁচতলা মার্কেট বানানো হবে। একপাশে থাকবে কফি হাউস। মাঠ রক্ষণাবেক্ষণেই ব্যয় করা হবে এটার আয় দিয়ে।

নিরাপত্তায় থাকবেন আনসার বা নিরাপত্তাকর্মীরা। মাঠ পরিচালনায় স্থানীয়দের সমন্বয়ে কমিটি থাকবে। চারপাশে থাকবে সুউচ্চ লোহার নেট। ভেতরে বোনা হবে সবুজ ঘাস।

মাঠের নকশায় ২৮ হাজার ৭১৮ বর্গফুট ওয়াকওয়ে রাখা হয়েছে হাঁটার জন্য। বসার জন্য মার্বেল টাইলসের বেঞ্চ থাকবে। সেটাকে ঘিরে থাকবে ফুল ও ফলের গাছ। ওয়াকওয়ের নিচে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে থাকবে গভীর ড্রেন। জমা হওয়া পানি ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে মাঠের ঘাসে চলে যাবে।

মাঠে প্রবেশের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৭৬২ বর্গফুটের তিনটি গেট থাকবে। ৭ হাজার ৭৩০ বর্গফুটের একটি বাস্কেটবল কোর্ট ও ৩৩ হাজার ৪৬৩ বর্গফুটের সবুজ এলাকা থাকবে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শিশুদের প্লে-জোনের জন্য রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৫ বর্গফুট জায়গা। ফুটবল মাঠের আয়তন হবে ৪০১ শতাংশ ও আর বাচ্চাদের খেলার স্থান ৬০ শতাংশ জায়গা। এ ছাড়া মার্কেটের বেজমেন্টে ৫৮টি এবং মাঠের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ৩১টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।

মাঠটির তিনটি ভাগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) মাঠ, ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব খেলার মাঠ ও আরেকটি অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনটি অংশের প্রতিটিই আকারে ফুটবল মাঠের সমান। নতুন পরিকল্পনায় মাঠের তিনটি অংশ এক করা হবে। এতে ধূপখোলা হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক মাঠের চেয়েও বড়। এমনটাই জানাল ডিএসসিসি।

সরেজমিন দেখা গেছে, ধূপখোলা মাঠটি এখন নানামুখী দখলের শিকার। খোলা মাঠটিতে এখনো মাদকসেবীদের আনাগোনা দেখা যায়। জনসাধারণের জন্য রাখা অংশটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া দেওয়া হতো। প্রধান তিনটি ফটকের দুটিই ভাঙা। চারপাশের গ্যালারি ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গ্যালারির ছাদে খোলা স্থানে মলত্যাগও করছে অনেকে। চারপাশে বেশ কয়েক বছর ধরে বসেছে অবৈধ বাজার ও দোকানপাট। সেখান থেকে আসা আবর্জনাও মাঠে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। কোথাও আবার নির্মাণসামগ্রীও রাখা।

মাঠের অপর অংশ ‘ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের খেলার মাঠ’ নামে পরিচিত।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ‘ধূপখোলা মাঠটি দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়েছিল। মাঠটিকে বিশ্বমানের করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চারপাশে থাকা দোকানগুলোকে পাঁচতলা ভবনে নিয়ে আসা হবে।’

তিনি আরো বলেন, এ মাঠটি ফুটবল খেলার উপযোগী করে তৈরি করা হবে। পুরো মাঠজুড়ে সবুজ ঘাসে ভরা থাকবে। আর মাঠের নিচে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। মাদকাসক্তরা যেন মাঠে ঢুকতে না পারে সেজন্য সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।

এদিকে ডিএসসিসির মাঠটি নিয়ে জবির সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে। জবি বলছে, মাঠটি ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মাঠের কিছু অংশ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলেন। তখন থেকে মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টির। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, মাঠটির প্রকৃত মালিক সিটি করপোরেশন। মাঠের উন্নয়নের পর জবির শিক্ষার্থীরাও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close