খুলনা ব্যুরো

  ২০ অক্টোবর, ২০২১

খুমেক হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য

দালাল সিন্ডিকেট ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ) কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। হাসপাতাল ঘিরে দালালচক্র রোগী ধরার ফাঁদ পেতে রেখেছে। অপরদিকে প্রেসক্রিপশন দেখার নামে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।

খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা রোগীদের টার্গেট করছে দালালরা। সুযোগ পেলেই রোগী ও স্বজনদের কাছে গিয়ে স্বল্প খরচে ভালো ডাক্তার দেখানো ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রলোভন দেখাচ্ছে।

বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টারে। তবে আগের চেয়ে দালালদের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।

সরেজমিনে খুমেক হাসপাতালের আন্ত ও বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর স্বজনরা সেবা নিয়ে চিকিৎসকদের রুম থেকে বের হলেই ৫-৭ জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ জোর করে রোগীদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে ছবি তুলছেন। যা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতেই খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এরপর নিয়মিত অভিযান পরিচালনায় কমে আসে দালালদের দৌরাত্ম্য। তবে কয়েক সপ্তাহ থেকে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে দালালরা। পাল্টিয়েছে দালালির ধরন।

প্রথমেই হাসপাতালে প্রবেশ করে দালালরা একাধিক জন মিলে বহির্বিভাগে টিকিট করে নিচ্ছে। রোগী ও রোগীর স্বজন হয়ে টার্গেট করছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। মাঝে মাঝে বহিবির্ভাগের বাইরে এসে ৮-৯ জন মিলে পরামর্শ করে হাসপাতালে প্রবেশ করছে তারা। এখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ম্যানেজ করেই তারা দালালি চালিয়ে যাচ্ছে।

খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহবধূ ইরানি আক্তার জানান, আগে হাসপাতালের দালালদের অত্যাচার বেশি ছিলো। দালালরা আগের চেয়ে কিছুটা কম। কিন্তু কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এখন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। হাসপাতালের ভেতরে বাইরে চিকিৎসকদের রুম থেকে বের হলেই রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র কেড়ে ছবি তুলছে। যা অত্যন্ত বিরক্তিকর।

খাদিজা ও তামান্না নামে রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য এখনো আছে, তবে আগের চেয়ে কম। কিন্তু রিপ্রেজেন্টেটিভরা যে সমস্যা করছে তা ঠিক করা দরকার কর্তৃপক্ষের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দালাল বলেন, কর্তৃপক্ষ আগের চেয়ে কড়া হওয়ায় তাদের কাজ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে গেটে ঢুকেই আনসার সদস্যদের তারা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছেন। তারপর সারা দিন তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা বহির্বিভাগে আসলে শভাভ সটকে পড়েন।

অপরদিকে রিপ্রেজেন্টেটিভরা বলছেন, আমরা সব সময় হাসপাতালে ঢুকি না- মাঝে মাঝে ঢুকি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো নির্ধারিত দিনে হাসপাতালে আসি। ব্যবস্থাপত্র দেখার নামে রোগীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

খুমেক হাসপাতালের আনসার বাহিনীর ইনচার্জ (পিসি) মো. জাকির হোসেন জানান, আনসার সদস্যরা দালালদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে রোগী ধরার জন্য হাসপাতালে প্রবেশ করতে দিচ্ছে- এমন অভিযোগ তার জানা নেই, তবে সত্যতা পেলে অভিযুক্ত আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোমতাজুল হক বলেন, আমরা নিয়মিত দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান করছি। তবে তবে রিপ্রেজেন্টিভদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। আমরা হাসপাতালে গেলে তারা বাইরে বের হয়ে যায়। আবার হাসপাতাল থেকে বের হলে তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যায়।

এ বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, দালারা যেন হাসপাতালে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলা আছে। দালালদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি। তবে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশের কোনো নিয়ম নেই। তারপরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন তাদের ভিজিটের দিন নির্ধারণ করা আছে। এ ছাড়া বর্হিবিভাগে যতক্ষণ রোগী থাকবে, ততক্ষণ তারা হাসপাতালগুলোতে ঢুকবে না- এমন নির্দেশনা দেয়া আছে। তার পরও কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close