ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

  ১৮ অক্টোবর, ২০২১

দেড় বছর পর স্বরূপে ঢাবি ক্যাম্পাস

করোনাভাইরাস মহামারির করণে দীর্ঘ ১৯ মাস বন্ধ থাকার পর রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। সকাল ৮টা থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণ। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে, কেউ রিকশায়, কেউ হল থেকে হেঁটে স্মৃতিমাখা পুরোনো সেই শ্রেণিকক্ষে ফিরেন।

প্রথম দিন সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পুরোদমে পাঠদান শুরু হয়নি। অনেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নিতে দেখা গেছে।

ক্লাস বা পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা টিএসসি, ডাকসুর ক্যাফেরিয়া, মধুর কান্টিন, বটতলা, ক্যাম্পাস শ্যাডো, মল চত্বর, কার্জন হল কিংবা শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে আড্ডায় মেতে ওঠেন সেই আগের দিনের মতো। দীর্ঘদিনের জমে থাকা গল্প আর আগামী দিনের ভাবনা নিয়ে চলে নানা আলাপন। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে গাজীপুর থেকে ক্যাম্পাসে এসেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান। তিনি বললেন, ‘লাল বাসটা আসলে আমাদের জন্য অনেকে আবেগের। এটাকে আমরা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বলি। সকাল-সন্ধ্যা এই লাল বাস আমাদের স্বপ্নকে ফেরি করে বেড়ায়।’

মহামারিকালে অনলাইনে ক্লাস আর মোবাইল ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা হলেও সামনাসামনি দেখা হলে কি আশ মেটে! বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বরে শিক্ষার্থীরা তাই আড্ডায় বসেছিলেন জমা কথার ডালি খুলে।

সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের ফাঁকে অর্থনীতি বিভাগের সুমায়া তাসনিম ঐশী বললেন, ‘কত দিন পর প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা, গল্প ফুরাবার নয় আজ। মহামারি আমাদের সোনালি দিনগুলোতে একটা বড় দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছিল। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে আজ আবারও প্রাণের মিলন। সত্যি জীবনের সব হতাশা আর অস্থিরতা এই মুহূর্তে নেই।’

টিএসসির ক্যাফেটারিয়ায় অনেক দিন পর খাবার খেয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান অর্পিতা বললেন, ২০ টাকায় টিএসসি ক্যাফেটারিয়ার দুপুরের খাবারটা অনেক মিস করেছি। একসঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে এই খাবারের তৃপ্তি ছিল অসাধারণ। সেই স্বাদ আবারো নেওয়ার সুযোগ হলো। খাবারের পর একটুখানি চায়ের আড্ডা জীবনে আবারো যোগ হলো, ভালো লাগছে পুরোনো দিনগুলো ফিরে পেয়ে।

মহামারির কারণে তৈরি হওয়া সেশনজট নিরসনে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ সামনে রেখে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। বেলা ১১টায় কলাভবনের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে এই শ্রেণি কার্যক্রম চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে প্রক্রিয়া, সেটি পরিপূর্ণ রূপ লাভ করল। আমরা পরিদর্শন করে দেখতে পেলাম বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভ্যাকসিনেটেড এবং শতভাগ উপস্থিতি। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত। আমাদের লস রিকভারি প্ল্যান রয়েছে। সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। কারণ আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীদের যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে, সে সময়টুকু যেন আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারি।’

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘লস রিকভারি প্ল্যানের’ আওতায় ছয় মাসের সেমিস্টার পরীক্ষাসহ চার মাসে এবং কোর্স পদ্ধতির ক্ষেত্রে ১২ মাসের পরিবর্তে ৮ মাসে সম্পন্ন করা হবে। তবে কোনোভাবে সিলোবাস সঙ্কুচিত করা যাবে না। সিলেবাস যেটা আছে, সেটা অনুযায়ী আমাদের অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রয়োজনে শনিবারও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

শরৎকালীন ও শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো মহামারিতে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া।

এখন থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলবে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনেও নিতে পারবে। শ্রেণিকক্ষ খোলার আগে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে গত ৫ অক্টোবর প্রথম ধাপে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়। পরে ১০ অক্টোবর দ্বিতীয় ধাপে স্নাতক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও হলে উঠেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারসহ বিভাগ-ইনস্টিটিউটের সেমিনার লাইব্রেরিগুলো তার আগেই ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়। সেসময় সীমিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবাও চালু করা হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে শুরুতে অনলাইনে ক্লাস না নিলেও পরে মহামারী দীর্ঘ হতে থাকায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। অনলাইন ক্লাসে সিলেবাস শেষ হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি পরীক্ষায় বসাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে চলমান সেমিস্টারের পরীক্ষা না নিয়েই অনলাইনে পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস চালিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close