নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ অক্টোবর, ২০২১

বর্জ্যঘর দখল করে ‘কর্মীদের’ কার্যালয়, ডাস্টবিন সড়কে

বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর (এসটিএস) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৯টি এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণের পরও মালিবাগের একটি এসটিএসে করা হয়েছে ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয়’। তার পাশেই রাস্তায় উন্মুক্তভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশপাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক আসার পথে ফ্লাইওভারের নিচে বর্জ্যঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধায় কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে এর সামনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যবহার করা হয়েছে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ছবি ও নাম। সাইনবোর্ডে বড় অক্ষরে ‘শুভ উদ্বোধন’ লিখে দেওয়া হয়েছে। তার নিচে স্থানীয় কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্রের নামও লেখা রয়েছে।

সাইনবোর্ডটি দেখে যে কারো মনে হবে এটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু কবে বা কখন এটি উদ্বোধন করা হয়েছে বা হবে সে বিষয়ে কিছুই লেখা নেই। এমন সাইনবোর্ডকে এসটিএস দখলের জন্য ‘চতুরতা’ হিসেবে দেখছে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসটিএসকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এটি মেয়র মহোদয় জানেনও না।’

এদিকে এসটিএসটি ব্যবহার না হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। মালিবাগ মোড়সংলগ্ন দৈনিক ভোরের কাগজের কার্যালয়ের সামনে ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে উন্মুক্তভাবে রাখা হয়েছে বর্জ্য। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বৃষ্টি হলে বর্জ্যের দূষিত পানি আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় দোকানদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিন থেকে চার বছর আগে এই বর্জ্যঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম অন্তত বর্জ্যরে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু বর্জ্যঘরটি সিটি করপোরেশনের লোকেরাই দখলে নিয়েছেন। দিনের বেলায় এসটিএসে রিকশা মেরামত করা হয়। রাতে কেউ থাকে না। কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীও আসেন না। তাহলে এত টাকা ব্যয় করে লাভ কী হলো? তবে স্থানীয় ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্র এটিকে এসটিএস হিসেবে মানতে রাজি নন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওটা আসলে এসটিএস না। এসটিএস হিসেবে করাও (নির্মাণ) হয়নি। আগে করা ছিল, সেটি ব্যবহার হচ্ছিল না বিধায় আমরা দেয়াল ঠিক করে সেটাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা ঘর হিসেবে করে নিয়েছিলাম।

প্রতিটা ওয়ার্ডে এসটিএস হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডে যখন একটি করে এসটিএস করা হচ্ছিল তখন আমাদের ওয়ার্ডেরটা পড়েছে মালিবাগ মোড়ে। ওটাও ভেঙে গেছে। মালিবাগ বাজারেও খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন সাহেবের সময়ে এটাকে এসটিএস হিসেবে নির্মাণের প্রক্রিয়া ছিল। কিছু কাজ করার পর আর হয়নি। কিন্তু পরে আমরা সেখানে দেয়াল তুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ঘর করে দিয়েছি। বৃষ্টি হলে যেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে থাকতে পারে।

এসটিএস নির্মাণের সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছিল, বিষয়টি তখন গণমাধ্যমেও এসেছিল। কিন্তু কেন সেটিকে এসটিএস বলা হচ্ছে না, জানতে চাইলে মত পাল্টে কিছুটা নমনীয় হন কাউন্সিলর মামুন রশিদ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা এসটিএস হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এসটিএসে যা যা থাকা দরকার সব সুবিধা ছিল না।’ নতুন করে এই ওয়ার্ডে আরো একটি এসটিএস আসছে বলেও জানান এই ওয়ার্ড কমিশনার।

সম্প্রতি মালিবাগ রেলগেটসংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে ওই সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এসটিএসটির প্রধান ফটক বন্ধ। ভেতরে কয়েকটি রিকশা রাখা হয়েছে। তার পাশেই রাস্তার মাঝখানে উন্মুক্তভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এজন্য ওই সড়কটিতে যানজটও লেগে থাকে। এসটিএসটির অপর পাশে রিকশা মেরামতের জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কিছু উন্মুক্ত দোকান। স্থানীয় কাউন্সিলর একে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা ঘর হিসেবে দাবি করলেও একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা কখনোই ওই ঘরে গিয়ে হাজিরা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, কার্যালয় হিসেবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখা হলেও এটি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে একরকম দখল করে রাখা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close