হাসান ইমন

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ডিএনসিসির সংযুক্ত ১৮ ওয়ার্ড

৫ বছরেও পায়নি সেবা

পাঁচ বছর পার হলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় সংযুক্ত হওয়া ১৮ ওয়ার্ডের বাসিন্দা সংস্থাটির চোখে পড়ার কোনো সেবা পায়নি। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া, জন্ম ও মৃত্যু সনদ প্রদান ছাড়া তেমন কোনো সেবা দিচ্ছে না সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে এসব এলাকার বাসিন্দা নানা সমস্যায় জর্জরিত। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ সিস্টেম, সড়কবাতি, বর্জ্য রাখার সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন নির্মাণ, সড়কবাতি না থাকায় সমস্যায় দিন পার করছেন বাসিন্দারা।

এসব এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত না হওয়ায় অনেকটাই কোনঠাসা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব এলাকার উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এ প্ল্যান অনুযায়ী শিগগিরই কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ মে সচিবালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ঢাকার আশপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ডিএনসিসি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ১৬টি ইউনিয়ন দুই সিটিতে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। আবার ওয়ার্ডগুলোকে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএনসিসির আওতাভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ড বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নের সেবা নিশ্চিত করতে পাঁচ আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। একইভাবে ডিএসসিসির শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ১৮টি ওয়ার্ডের সেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়েছে। ডিএসসিসির নতুন এলাকায় এরই মধ্যে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করলেও বিপরীত চিত্র ডিএনসিসিতে।

এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট ডুবে যায়। ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় সহসায় সরছে না এসব পানি। নেই মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা। এছাড়া নগর উপযোগী সড়ক নেই। প্রত্যকটা সড়কই ভাঙাচোরা। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় এসব এলাকা। নতুন করে সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় ফুটপাতও হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ডিএনসিসির আওতাভুক্ত হওয়ার পর উন্নয়নের আশ্বাস, প্রকল্প অনুমোদনের কথা শুনলেও বাস্তবে কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা।

ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, ঢাকা জেলার সাবেক ৮ ইউনিয়ন-দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, হরিরামপুর, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ এবং ডুমনি ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এসব এলাকায় উন্নয়নের ন্যূনতম ছোঁয়া লাগেনি। বরং দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে থাকলে স্বাভাবিক যে উন্নয়ন হতো, তাও বন্ধ হয়ে গেছে নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর।

এদিকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো কাজই করতে পারেননি নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। করপোরেশনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ডসভায় এই নিয়ে আক্ষেপও করেছেন অনেকে। অনেকে ফেসবুকে লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে ডিএনসিসির ৪৯ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম বলেন, মানুষের ‘বকা’ খেতে খেতে ঘরেও থাকতে পারছি না। ‘সুয়ারেজের পানি, এটা ড্রেন না রাস্তা বোঝার উপায় নেই। মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে করতে, বকা খাইতে খাইতে ঘরে থাকতে পারছি না। এই রাজধানী ঢাকায় আমরা কীভাবে বসবাস করি, একটু দেখে যান।’

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। সেখান থেকে ৯৭ কোটি টাকা গত অর্থবছরে ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তা দিয়ে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে ওই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরপর সড়ক ও ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করা হবে। পর্যায়ক্রমে এসব এলাকা সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close