চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চট্টগ্রামে আরেক প্রতারণার ফাঁদ সেভেন স্টার গ্রুপ

রাজধানীর ইভ্যালির মতোই প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রামে এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে। সেভেন স্টার গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ও জমিজমা আত্মসাৎসহ নানা হয়রানির অভিযোগ ওই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিরীহ ভুক্তভোগীরা।

গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর মোমিন রোডের একটি কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেভেন স্টার গ্রুপের কাছে হয়রানির ও প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। অসহায়ের সুযোগে বাড়িঘর দোকানপাট জিম্মায় নেওয়া চেকে ইচ্ছামতো টাকার অংশ লিখে সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ তাদের। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী আসাদুল ইসলাম জানান, নগরীর সরাইপাড়া ১২নং ওয়ার্ডে পাহাড়তলীর হাজি আশ্রাফ আলী রোডের লাকী হোটেলের গলিতে সেভেন স্টার ক্লাব ও সেভেন স্টার গ্রুপ নামীয় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মো. মাহবুব আলী নামে এক ব্যক্তি ঋণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করেন। দিনে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম থাকলেও, সেখানে রাতের বেলা চলে জুয়ার আসর। চলে ক্যাসিনোর জমজমাট আড্ডা। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করেছেন তারা। প্রতারক মাহবুব আলীর সহযোগী রহমতুল্লাহ। রহমতুল্লাহর বাবার নাম মৃত আহমদ মিয়া।

সেভেন স্টার গ্রুপ সমিতির অসহায় বিপথগ্রস্ত লোকদের চড়া সুদে স্বল্প টাকার ঋণ দেয়। বিপরীতে জামানতস্বরূপ একাধিক অলিখিত চেক ও স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। পরে সুদসহ সমুদয় টাকা আদায় করে নেওয়া হয়। এত টাকা দিতে না পারলে গ্রাহকদের মাস্তান লেলিয়ে দিয়ে বাড়িঘর জবর দখল করে নেওয়া হয়।

একই কথা জানান জসিম উদ্দিন মনছুরী নামে ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, চক্রটির প্রধান মাহবুব আলী অসহায় বিপথগ্রস্ত লোকদের টার্গেট করে তাদের স্বল্প সংখ্যক ঋণ দেন। বিপরীতে গ্রাহকের স্বাক্ষরিত জামানতস্বরূপ একাধিক অলিখিত চেক ও খালি স্ট্যাম্প নিয়ে নেন। তার সহযোগী প্রভাবশালী কুখ্যাত রহমত উল্লাহ। এদের আছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরে ওই সব চেকে মোটা অঙ্কের টাকা বসিয়ে ও স্ট্যাম্প ব্যবহার করে আদালতে মিথ্যা মামলা করে আইনের প্যাঁচে ফেলে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা, জমি, দোকান ঘরবাড়ি আত্মসাৎ করে আসছে। তিনি আরো জানান, মাহবুব আলী জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। সরকার সমর্থক লোকজনের প্রভাব খাটিয়ে, প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করে এবং সন্ত্রাসী লেলিয়ে ভয় ভীতির মাধ্যমে প্রতারণা হয়রানি ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রতারিত ভুক্তভোগীদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম জানান তিনি ওই সেভেন স্টার থেকে ৩ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসার কাজে ঋণ নিয়েছিলেন। শতকরা ৬ ভাগ সুদে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধও করেন। নিয়মিত পরিশোধের এক পর্যায়ে একদিন তিনি একটি নোটিস পান তার কাছে ওই সেভেন স্টার গ্রুপের ৩০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে তার দোকান বাড়ি লিখে দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন ভুক্তভোগিরা বলেন, মাহাবুব আলী তার সেভেন স্টার গ্রুপ নামীয় প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতাদের বিপরীতে মূল টাকা আদায়ের পর বিগত ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিরীহ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ করে আসছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুছ মজুমদার, মো. সালাউদ্দিন খোকন, সাদেক আলী টুটুল প্রমুখ। অনুরুপভাবে মোটা অঙ্কের হয়রানির শিকার মোহাম্মদ কুদ্দুস মজুমদার মিথ্যা চেকে ৫০ লাখ টাকা, সালাহউদ্দিন খোকন ৫০ লাখ টাকা, সাদেক আলী ৫০ লাখ টাকা এবং জসিমউদ্দিন মনছুরী ৩০ লাখ টাকার ভুয়া চেকে জমিজমা দোকানপাট ইত্যাদি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনা রয়েছেন বলে নোটিস দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুছ মজুমদার, মো. সালাউদ্দিন খোকন, মো. সাদেক আলী টুটুল, মো. লোকমান, জসিম উদ্দিন মনছুরী, আরো উপস্থিত ছিলেন ২৪নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ জাকারিয়া, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

প্রতারিত নিরীহ ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহামান্য হাইকোর্ট তথা আদালত ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সহায়তা ও সহযোগিতা কামনা করে প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাছে বিনীত আহ্বান জানান।

জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে ভুক্তভোগীরা মামলা করলেও সিন্ডিকেটের কারণে উল্টো ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close