শেখ মো. ফুয়াদ, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
অক্সিজেন সংকটে সাহায্যের হাত
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড রোগীর চাপ। সেই সঙ্গে টান পড়েছে অক্সিজেনের। অক্সিজেন সংকটে দিশাহারা রোগীর স্বজন। সেন্ট্রাল অক্সিজেনে টান পড়ার পাশাপাশি সড়কে যানজট থাকায় রিফিলের পর সময়মতো হাসপাতালে আসতে পারছে না অক্সিজেনের সিলিন্ডার। ফলে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। এ পরিস্থিতি করোনা রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংস্থা। এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে সংকট কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর সহায়তা পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবীর জানান, এই সহায়তায় অব্যাহত থাকলে মমেক হাসপাতালে আসা রোগীদের করোনা সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংক্রমণ বাড়ায় প্রতিদিনই মমেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের চাপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬১৭টি নমূনা পরীক্ষায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪৯৫ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর প্রভাব পড়ছে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। ৫০০ শয্যার এই ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত সোমবার চিকিৎসাধীন আছেন ৫৫০ রোগী। আইসিইউ ও সাধারণ ওয়ার্ডসহ কেবিনেও খালি নেই কোনো বিছানা। রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন।
বিশেষ করে রোগী বাড়ায় ১০ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ভান্ডারে টান পড়েছে। অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবীর জানান, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সক্ষমতা ১০ হাজার লিটার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার লিটার করার জরুরি কার্যাদেশ দেওয়া হলেও কাজ শুরু করা হয়নি। অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, সিলিন্ডার থাকলেও রিফিলের জন্য পাঠাতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে। সড়কে যানজটে আটকা পড়ায় সময়মতো এসব সিলিন্ডার রিফিলের পর মমেক হাসপাতালে পৌঁছাতে পারছে না। প্রতিটি ছোট সিলিন্ডার দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন চারবার ট্রাকে করে এসব সিলিন্ডার আনানেওয়া করতে হচ্ছে। ফলে চাহিদার অক্সিজেন সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। এ রকম পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন অনেকে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সংকট মোকাবিলায় দুই হাজারের বেশি অক্সিজেনের সিলিন্ডার প্রদানের পাশাপাশি রিফিল করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। একই সঙ্গে চিকিৎসক সংকট সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ১৩ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও তার বড় ভাই ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আমিনুল হক শামীম সিআইপি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-আইইবি, ময়মনসিংহ কেন্দ্র ময়মনসিংহ ক্লাব, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ রিফিলের জন্য যাতায়াত কাজে একটি ট্রাক সহায়তা দিয়েছেন। ময়মনসিংহের প্রচার বিমুখ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুসরাত জাহান ও দেশ-বিদেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যরা বাইপেপ মেশিন ও ইনজেকশনসহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এর বাইরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ময়মনসিংহ মেডিকেলে করোনা রোগীদের সহায়তায় হাত বাড়িয়েছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আরো ১৭ জনের মৃত্যু
মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন করোনায় এবং ১১ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার সোয়া ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বলেন, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ইউনিটে ১৭ জন করোনায় মারা গেছেন তন্মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার দুজন ও নেত্রকোনার দুজন, নরসিংদী ও দিনাজপুরের একজন করে। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১১ জন মারা গেছেন তন্মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার আটজন, নেত্রকোনার একজন ও টাঙ্গাইলের দুজন।
"