নিজস্ব প্রতিবেদক
কাঁটাবন বাজার
আলো-বাতাসের স্বল্পতায় পশুপাখির আর্তনাদ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধে স্থবির নগরজীবন। জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ রয়েছে প্রায় সবকিছুই। বন্ধ রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেট কাঁটাবনের পশু-পাখির বাজারও। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নিরীহ পোষা পশু-পাখি ও মাছের জীবন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লকডাউন যেন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁটাবনের খাচায়বন্দি পশু-পাখিদের জন্য। দোকান বন্ধ থাকায় আলো, বাতাস আর খাবারের অভাবে এরই মধ্যে মারা গেছে প্রায় ৫০০ পশু-পাখি। খাঁচাবন্দি এসব প্রাণীর মৃত্যুর জন্য ব্যবসায়ীদের অমানবিক আচরণকে দুষছেন পরিবেশবাদীরা। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো খাবার সরবারহে দৈনিক দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান এই খাতের ব্যবসায়ীদের।
এদিকে বিক্রি না থাকায় খাবার খরচ ও দোকান ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি এড়াতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের। করোনার সোয়া বছরে, রাজধানীতে পোষা পশু-পাখি ও সেগুলোর খাবার বাণিজ্যে ক্ষতি অন্তত শত কোটি টাকা।
লকডাউনে দিন কিংবা রাত কাঁটাবনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকলে কানে ভেসে আসে অবুঝ প্রাণীগুলোর আর্তনাদ। পাখির আর্তনাদে যে কারো হৃদয় দুমড়ে-মুচড়ে যাবে। একে তো খাঁচায় বন্দি, তার ওপর দোকান বন্ধ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, প্রতিটা মুহূর্ত কাটে অন্ধকারে। অন্যসময় উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য মনিবের (পশু-পাখি ব্যবসায়ী) কাছে বিশেষ কদর থাকলেও দুঃসময়ে কেউ খোঁজও রাখে না। দিনের পর দিন আলো, বাতাস, খাবার না পেয়ে মৃত্যুই যেন শেষ ঠিকানা।
পশু-পাখি বিক্রেতারা বলছেন, তারা নিজেরা না খেলেও পশুপাখিকে খাবার দিচ্ছেন। লকডাউনে দোকান না খোলার কারণে অনেকগুলো পাখি মারা গেছে। এক বেলায় যদি ৩ বেলার খাবার দেওয়া হয় তা হলে পশুপাখি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি থাকে। এক ব্যবসায়ী বললেন, পাখিগুলো তার সম্পদ। কিন্তু নিজে খেতে পারেন না, ওদের কি খাওয়াবেন।
কঠোর লকডাউনে মানবিক দিক বিবেচনায় পশু-পাখিদের যত্ন নিতে সকাল-বিকাল ২ ঘণ্টা করে সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। তবে এমন সিদ্ধান্ত খুব একটা কাজে আসছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি আতিয়ার রহমান রিপন গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে এই সময়ে আসলে পশু-পাখি এবং অ্যাকোরিয়ামের জন্য যথেষ্ট নয়।
অ্যানিম্যাল কেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আফজাল খান বলেন, মানুষের মতো পশু-পাখিদেরও দীর্ঘ সময় আবদ্ধ থাকা সম্ভব নয়। অবলা প্রাণীদের মৃত্যুর দায় দোকান মালিকরা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, অসহায় প্রাণীগুলো যাতে অবহেলার শিকার না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটা না পারলে পশু-পাখিগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘কাটাবন মার্কেটে বিদ্যমান বিভিন্ন পোষা প্রাণী ও শোভাবর্ধক মাছের জীবন রক্ষার্থে আমরা চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও দোকানগুলো প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য খোলা রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে পশু-পাখি ও মাছের খাবার দেওয়া, জীবন রক্ষাকারী টিকা ও ওষুধ দেওয়া, আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ দেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে পশু-পাখি বা মাছ মারা যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন।’
"