রাজশাহী ব্যুরো
প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পেল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে সহায়তায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন রাজশাহীর ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা উপহার প্রদান করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। গতকাল বেলা আড়াইটায় নগর ভবনের সিটি হলরুমে স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে প্রণোদনার অর্থ তুলে দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র বলেন, ‘করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন-সৎকারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা আমাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ যখন তার পরিবার ও স্বজনরা ফেলে চলে গেছে, তখন সযত্নে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে সেই লাশ পরম মমতায় দাফন করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুভয়কে জয় করে মানবিক ও মহত কাজটি করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। আমি বিশ্বাস করি, এই কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে তারা পুরস্কৃত হবেন। মহতী এই কাজে অতীতেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পাশে ছিলাম, আগামীতেও পাশে থাকব। দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আগামীতেও নাগরিকদের পাশে থাকবে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এই প্রত্যাশা করি।’
অনুষ্ঠানে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহীর একাদশ শ্রেণির ছাত্র আহিদ উল হক ও গৃহিণী মোনালিসা জলি। আহিদ উল হক বলেন, ‘আমি প্রায় ৯৫টি লাশ দাফনে অংশ নিয়েছি। আমার পরিবারের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।’ মোনালিসা জলি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় নারীদের লাশ দাফনে কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে আমি লাশ দাফনের কাজে নিয়োজিত হই। একেকটা লাশ দাফন মানে একেকটা গল্প, দুর্লভ অভিজ্ঞতা। হাসপাতালের মর্গে একজন নারীর লাশ রাখা হয়েছিল, তাকে শেষবারের মতো দেখার কেউ ছিল না। তবে লাশের হাতে থাকা একটি আংটি নিতে এসেছিলেন লাশের এক স্বজন। করোনায় আক্রান্ত স্বামীর সেবা করতে গিয়ে মারা গেছেন স্ত্রী এমন লাশ দাফনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুই ধরনের চিত্রই আমরা দেখেছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও বারিন্দ মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মঞ্জুরুল হক এবং উপদেষ্টা রাবির প্রফেসর ড. শহিদুল আলম। তারা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে যখন করোনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফনে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এগিয়ে আসেনি, সে সময়েও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফন করেছে। এ কাজে শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। মহতী কাজে উৎসাহ প্রদানে প্রণোদনার অর্থ প্রদান করায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও রাসিক মেয়রের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, সচিব মো. মশিউর রহমান, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন রাজশাহীর পরিচালক মো. কায়সার পারভেজ।
"