খুলনা ব্যুরো

  ১৩ এপ্রিল, ২০২১

খুলনার মার্কেটগুলোয় ঈদের কেনাকাটা

স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই নেই

বিধিনিষেধের চার দিনের মাথায় ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সারা দেশের সঙ্গে খোলা হয় খুলনার মার্কেটগুলো। করোনা বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিং মল খোলার কথা থাকলেও তা মানছেন না কেউই। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কারোর মধ্যে নেই শারীরিক দূরত্ব প্রতিপালন করার বালাই। অনুপস্থিত স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়গুলোও। এমন চলতে থাকলে কঠোর পদক্ষেপে যাওয়ার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক।

করোনা ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে শুরু হয় লকডাউন। শপিং মলসহ বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেয় সরকার। এখনো বন্ধ দূরপাল্লার পরিবহন, রেল ও বিমান। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ১৮ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু লকডাউনের আগে থেকে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার জন্য। গত বছর করোনার কারণে বিভিন্ন দফায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা লোকসানের মুখে পড়ে। এছাড়া কয়েক দিন পর রোজা শুরু ও তারপর ঈদুল ফিতরতো রয়েছেই। এমন বাস্তবতায় এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য সরকার গত ৯ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই আট ঘণ্টা দোকান খোলার অনুমতি দেয়।

গতকাল নগরীর ডাকবাংলোর মোড়ে সরেজমিন দেখা যায় এত মানুষের ভিড় যে ঢোকা যাচ্ছে না ডাকবাংলো সুপার মার্কেটের সামনে থেকে। একই অবস্থা শপিং কমপ্লেক্সের সামনেও। সংযত পায়ে হাঁটা। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল শুধু পা আর পা। আর ওপরে অগণিত মাথা। শরীরে সঙ্গে শরীর মিশিয়ে চলাচল। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। বেশি সংখ্যক মানুষের মাস্ক হাতে, গলায় কিংবা পকেটে। আর নারীদের মাস্ক নিজস্ব পার্টসে। অপরদিকে হাতে গ্লোবস নেই কারোরই। মার্কেটে প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক স্প্রে এবং দোকানে প্রবেশের সময় হাতে হ্যান্ড স্যানিটাউজার দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটি কোথাও দেখা যায়নি।

ডাক বাংলো মোড়ে কথা হয় হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে। প্রতিদিনকার মতো তিনি ডিউটি করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাজার পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, বাজারগুলোতে মানুষে মানুষে ঠাসা। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার যেন একটা প্রতিযোগিতা চলছে সবার মধ্যে। যা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে কয়েক গুণ। তিনি আরো বললেন, করোনা একটি মাহামারি ভাইরাস এবং এটা অধিকতর ছোঁয়াচে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে দোকানপাট খোলা রেখে দেশ চলতে পারে না। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে।

নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন জানান, আমরা বাঁচতে চাই কিনা এটা আমাদের আগে অনুধাবন করতে হবে। আমরা ঈদে নতুন পোশাক কিনব নাকি পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকব সেটা আগে বুঝতে হবে। কেননা এবার নতুন পোশাক না হলে ঈদ ভালো কাটবে কিন্তু পরিবারের কারো করোনা হলে ঈদ ভালো কাটবে না।

এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন দোকানির সঙ্গে, তারা জানান আমরা প্রায়শই মাস্ক পরে দোকানদারি করি। তবে ক্রেতারা অনেক সময় মাস্ক পরতে চান না। আমরা বললে তারা আরেক দোকানে চলে যান। এমনকি একটু সরে সরে দাঁড়াতে বললেও দোকান থেকে বেরিয়ে যান। অপরদিকে হ্যান্ডস্যানটাইজারের কথা জিজ্ঞাসা করলে দুই-একজন বাদে আর কেউই দেখাতে পারেননি। তবে যাদের আছে তারাও সঠিকভাবে ব্যবহার করেন না বলেই জানান বিক্রেতারা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের বলাছিল স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটেছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। বাজারগুলোতে আগত মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শরীরিক দূরত্ব যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। আগামী ১৪ তারিখ থেকে সরকারের কঠোর লকডাউনের বিষয়ে আমরাও আগামীর জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close