রাজশাহী ব্যুরো

  ১৩ এপ্রিল, ২০২১

রাজশাহীতে আইসিইউ সংকট

রাজশাহীতে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তারপরও রাজশাহীতে এখন করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। করোনা শনাক্তকরণ ও করোনা রোগীদের চিকিৎসাতেও নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে করোনা শনাক্ত করা হতো। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেহেতু রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার করোনা পরীক্ষা করা হয় একমাত্র রাজশাহীতেই সেহেতু চাপও বেড়েছে করোনা পরীক্ষার।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কলেজের পিসিআর ল্যাবে চারটি শিফটে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এক-একটি শিফটে ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ফলে গড়ে প্রতিদিন ৩৮৪টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহীতেই প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সাবেরা গুলনাহার জানান, আমাদের ল্যাবে প্রতিদিন যে পরিমাণ নমুনা আসে তাতে চারটি শিফট চালু করেও আমরা সব নমুনা পরীক্ষা করতে পারছি না। প্রতিদিন চার শিফটে কাজ করেও ৭৫০টি নমুনা জমে গেছে। পরীক্ষা করতে পারছি না। এছাড়া লোকবলের অভাব তো আছেই। এছাড়া আমাদের ছয়জন টেকনিশিয়ানের করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাবেরা গুলনাহার আরো জানান, তারপরও যারা নমুনা দিতে আসছেন তারা বিদেশগামী কিংবা কোনো প্রয়োজনে নমুনা পরীক্ষা করতে এসে পজিটিভ হচ্ছেন। অথচ যাদের উপসর্গ আছে সে রকম মানুষজন কম নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। তারা নমুনা দিতে এলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে। এদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত কোনো ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল নেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৯, ৩০, ২৫, ২২, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড করোনা ওয়ার্ড ঘোষণা দিয়ে করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অথচ গত বছর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে রাজশাহীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও মিশন হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও অক্সিজেনের ব্যবস্থা না থাকায় ও করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় হাসপাতাল দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই নতুনভাবে বিশেষায়িত হাসপাতালের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনজন রোগী মারা গেছে। এ হাসপাতালে সোমবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে ৬২ জন ও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় রোগটির উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি আছে ৪৫ জন। এ হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ ব্যবস্থার মধ্যে ভর্তি থাকা ৯ জনই করোনা রোগী। তবে আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, এ হাসপাতালে আরো ৮টি আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও করোনা ওয়ার্ডের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। আর এসব বিষয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর সদর হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি তাদের নজরে দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close