নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

না.গঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক কারবার

রাস্তার পাশেই মাদক নিয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রেতারা হাঁকডাক দিচ্ছেন। এত কিছুর পরও কোনো অদৃশ্য কারণে প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন চানমারী বস্তির পাশে অবস্থিত। এখানেই রয়েছে আদালতপাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়। অথচ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আদালতপাড়া ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের পাশে চানমারী বস্তিতে চলছে নির্বিঘেœ মাদক কেনাবেচা। কয়েক দশক ধরে এই চানমারী বস্তিই মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এরপরও চানমারীতে মাদক ব্যবসার মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না।

রাস্তার পাশেই মাদক নিয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রেতারা হাঁকডাক দিচ্ছেন। এত কিছুর পরও কোনো অদৃশ্য কারণে প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। মাঝে মধ্যে দু-একটা অভিযান পরিচালনা হলেও তা ধারাবাহিক নয়। সকালে অভিযান চললে দুপুরেই জমে উঠছে মাদকের হাট। ফলে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মাদক নির্মূলের জন্য চানমারী বস্তি উৎখাতের পক্ষে মত প্রকাশ করলেও এ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

চানমারী এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত। আর ৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। যিনি প্রায় প্রতিটি সভা সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। মাদক বিক্রেতাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে শায়েস্তা করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন কয়েকবার। সেই শামীম ওসমানের বাড়ির কাছাকাছি চানমারী এলাকার অবস্থান হলেও ওই স্থান থেকে মাদক নির্মূলে তাকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। যা নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, চানমারী থেকে মাদক নির্মূলের জন্য মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে রেজুলেশন হলেও অদৃশ্য কারণে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবসার নেপথ্যে কারা তাও গুরুত্ব দিয়ে খুঁজে বের করতে দেখা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ফলে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রশ্ন, মাদক বিক্রেতা বা এর নেপথ্যে যারা আছে তারা কী পুলিশ প্রশাসনের চেয়ে ক্ষমতাধর? বা কোনো অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে প্রকাশ্যেই চলছে চানমারী এলাকায় মাদক ব্যবসা? এই প্রশ্ন বছরের পর বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে ঘুরপাক খেলেও উত্তর মিলেনি আজও।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালানো হলেও যারা ধরা পড়ছেন তাদের বেশির ভাগই মাদকসেবী এবং খুচরা বিক্রেতা তথা সেলসম্যান। রাগববোয়ালরা থাকছে পর্দার আড়ালে। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব।

সচেতন মহলের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা এই স্পট থেকে মাদক বিক্রির মাসোহারা পেয়ে থাকেন। ফলে মাদক নির্মূলের বদলে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, আমাদের পুলিশ, ডিবি পুলিশ এখানে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। মাদক বিক্রেতা এবং সেবীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে সাক্ষীদের দুর্বলতার কারণে তারা জামিন পেয়ে যাচ্ছে এবং জামিনে এসে তারা মাদক বিক্রি শুরু করে। এ অবস্থায় আমাদের কী করার আছে। আসলে মাদক নির্মূলে শুধু পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব বা কোনো বিশেষ পেশার লোকেরা কাজ করলে হবে না, সুশীল মহল থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের এগিয়ে আসতে হবে। ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, চানমারীতে যেহেতু সরকারের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বস্তি বসিয়ে মাদক কেনা বেচা হচ্ছে সেহেতু আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেছিলাম, এই বস্তি উচ্ছেদ করতে। মাসিক আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়েও বিষয়টি একাধিকবার বলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিলে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছি না।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাউছুল আজম চানমারী বস্তিকে মাদক নির্মূলের প্রয়াসে ওই স্থানে স্বপ্নডানা স্কুল গড়ে তোলেন। এরপর গাউছুল আজমের কঠোরতায় চানমারী থেকে মাদক নির্মূল হয়। কিন্তু গাউছুল আজমের বিদায়ের পর আবারও মাদকে সয়লাব হয়ে যায় চানমারী এলাকা।

এর আগে নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য জেলা প্রশাসকরা চানমারী থেকে মাদক নির্মূলের বিষয়ে কথা বললেও বাস্তবতার দেখা মেলেনি।

এই প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জে সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে মাদক কম-বেশি সবখানেই আছে। তবে আমাদের কার্যালয়ের সামনে চানমারী এলাকায় যে এভাবে মাদকের হাট বসে সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। কারণ আমি এই জেলায় নতুন যোগদান করেছি। এখন যেহেতু জানতে পেরেছি সেহেতু এ বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close