আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের লাশকাটা ঘর
লাশ পচে গন্ধ, নোংড়া পরিবেশে পোস্টমর্টেম
নারায়ণগঞ্জ জেলারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রয়েছে জেলার একমাত্র মর্গ (লাশকাটা ঘর)। মর্গটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক হিসেবে পরিচিত হলেও আদতে এখানে আধুনিকতা বলতে যা বুঝায়, তার লেশমাত্র নেই। এখানে নেই কোনো আধুনিক ব্যবস্থাপনা। অন্যদিকে চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে এই লাশকাটার ঘরটি। সেখানে পচা লাশের মধ্যেই করা হয় পোস্টমর্টেম।
জেলায় একমাত্র এই মর্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও বছরের অধিকাংশ সময়েই মর্গের এসি থাকে নষ্ট। এছাড়াও মর্গে মরচুয়ারি কুলার (লাশ সংরক্ষণের ফ্রিজ) নেই। নেই লাশ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা। লাশ রাখার জন্য কোনো কফিন নেই। ফলে অতিরিক্ত লাশ আনা হলে লাশ অপরিচ্ছন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। এ ধরনের একাধিক সমস্যার মধ্য দিয়েই এখানে চলে লাশ ব্যবচ্ছেদের কাজ। এদিকে সরকারি তহবিলের অভাবে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও এসব সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি, এই দাবি এই মর্গ-সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুই কক্ষের মর্গ হাউসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের (এসি) চারটি মেশিনের ব্যবস্থাপনা থাকলেও এখন একটি এসিও নেই। মর্গের চারটি এসি বিকল হয়ে গেছে। এসি চারটি প্রায় তিন মাস আগে মেরামতের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হলেও এখনো ঠিক করা হয়নি। ফলে লাশ দ্রুত পচে যায়। মর্গ হাউসে দুটি কক্ষে দুটি টেবিলে রাখা যায় মাত্র দুটি লাশ। দুই এর অধিক লাশ আসলেই দেখা দেয় বিপত্তি। মরচুয়ারি কুলার কিংবা কফিন না থাকায় লাশ বাধ্য হয়ে মাটিতে ফেলে রাখতে হয়। নিয়মানুযায়ী দিনের পর্যাপ্ত আলোয় ব্যবচ্ছেদের কাজ করার কথা। মর্গে বিকালে আসা সব লাশের ব্যবচ্ছেদ পরদিন সকালে করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, সময়মতো ডাক্তার না আসায় প্রায় সময় পরদিন সকালেও লাশের ব্যবচ্ছেদ করা হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাশ পড়ে থাকে। ময়নাতদন্তের পরে লাশের সঙ্গে আসা স্বজনেরা একদিকে আপনজনের লাশ পাওয়ার অপেক্ষা করে অন্যদিকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় লাশে দ্রুত পচন ধরে। ছড়ায় দুর্গন্ধ। এ কারণেই লাশের স্বজনরা প্রায় সময় আপনজনের লাশের ব্যবচ্ছেদ করতে অসম্মতি জানান।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মর্গ হাউসটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে মর্গের ব্যবস্থাপনায় কোনো উন্নতি করা হয়নি। কোনো রকমে চলছে ময়নাতদন্ত। মর্গের আধুনিকায়নে মরচুয়ারি কুলারের জন্য ৪৮ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি এখনো পর্যন্ত।
মর্গের তত্ত্বাবধায়ক শ্রী দরবন বলেন, মর্গে লাশের সংখ্যার কথা বলা যায় না। কখনো মর্গ খালি থাকে আবার কখনো চার থেকে পাঁচটা লাশও থাকে। তখন লাশ নিচেই রাখি। লাশের সঙ্গে রক্ত পানি থাকে। এখন শুধু ফ্যান আছে, এসি নেই। এসি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মর্গের নিকটবর্তী ঘরের একজন বাসিন্দা বলেন, লাশ সময়মতো ব্যবচ্ছেদ করা হয় না। অনেক সময় ডাক্তার আসেন না, নানা কারণে সময়মতো ব্যবচ্ছেদ না হওয়ায় পচা লাশের দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন আমাদের মর্গের সব কাজ গণপূর্ত বিভাগ করে। এসি মেরামতের জন্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঠিক করে পাঠানো হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এই বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের মর্গের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম এখন আমাদের দায়িত্বে নেই। বৈদ্যুতিক সব কাজ ঢাকার গণপূর্তের বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা এর আগে মর্গের এসিগুলো ঠিক করেছিলাম। এখন কোনো ত্রুটি হলে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে মর্গের মরচুয়ারি কুলারের জন্য ৪৮ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি বলে জেনেছি। ঢাকা গণপূর্তের প্রধান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী যুবায়ের বলেন, নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মর্গের এসিগুলো অনেক পুরাতন এবং কার্যকারিতা নষ্ট প্রায়। এসিগুলো মেরামত করা ও নতুন এসি ক্রয়ে মন্ত্রাণালয়ে টাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই মর্গের মরচুয়ারির জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রাণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অর্থায়নের ব্যবস্থা হলেই মর্গের সমস্যার সমাধান হবে।
"