নিজস্ব প্রতিবেদক
পল্লী বিদ্যুতের ৪৬১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়ন তথা ভিশন ২০২১ অর্জনপূর্বক ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তার ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রিডভুক্ত ৪৬১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ২৮৮ উপজেলায় উদ্বোধন করেন এবং উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে ১৭৩ উপজেলা। এ পর্যায়ে আরইবির ভৌগোলিক অঞ্চলে অবস্থিত অফ গ্রিড এলাকার মোট ১০৫৯টি গ্রামে (পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ) শতভাগ বিদ্যুতায়ন মুজিববর্ষেই সম্পন্ন হবে।
আরইবির আওতায় অফ গ্রিড ১০৫৯টি গ্রামে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে ১০৫৯টি গ্রামে তিন ধাপে এ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপের ৬৪৬ গ্রাম তুলনামূলকভাবে কম প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এগুলোতে চলমান বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম চলতি মাসেই সম্পন্ন হবে। এর বাইরে ২৯টি অতি দুর্গম গ্রাম বাদে বাকি ৩৮৪ গ্রামে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। এই ১০৩০টি গ্রাম সাব-মেরিন কেবলের মাধ্যমে গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
চরাঞ্চলে অবস্থিত গ্রামগুলোতে সোলার মিনি গ্রিডের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আরইবি বদ্ধপরিকর। বর্তমানে আরইবির মোট গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে ৩ কোটিতে পৌঁছেছে এবং দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার প্রায় ৯৭ শতাংশ। ৫ লাখ ৩০ হাজর কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং ১০৭০টি সাবস্টেশনের মাধ্যমে আরইবি বর্তমানে তার এই তিন কোটি গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আরইবির বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উপকারভোগী। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশের অগ্রসর এবং অনগ্রসর সব পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎসেবার আওতায় আনার মাধ্যমে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরইবি প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় আশা করা যাচ্ছে যে, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই অফ গ্রিড এলাকার গ্রামগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে। অর্থাৎ মুজিববর্ষেই আলোকিত হবে সমগ্র বাংলাদেশ। এ কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য আরইবি মাঠপর্যায়ে আলোর ফেরিওয়ালা, উঠান বৈঠক, দুর্যোগে আলোর গেরিলার মতো নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘স্পট মিটারিং’-এর মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আরইবির ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ টিম। এ ছাড়া মানসম্মত গ্রাহকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আরইবি গ্রাহকের সঙ্গে নিয়মিতভাবে উঠান বৈঠকের আয়োজন করছে, যেখানে গ্রাহকের নানা সমস্যার কথা শোনা ও তার তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অধিকন্তু যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ‘সকল ত্যাগে পল্লী বিদ্যুৎ রাখিব সচল’ এই স্লোগান নিয়ে আরইবির দুর্যোগে আলোর গেরিলা দল সমগ্র পল্লী অঞ্চলে গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন অত্যন্ত কঠিন কর্মযজ্ঞ হলেও প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে এ দুরূহ কর্মটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আরইবি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
"