নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রমনা পার্ক খুলতে বাধা কোথায়

করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়া বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলতে শুরু করেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে গেছে দেশের সব প্রত্ন জাদুঘর ও প্রত্ন স্থাপনা। খুলে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক ও চন্দ্রিমা উদ্যান। কিন্তু রাজধানীবাসীর প্রাতঃভ্রমণ ও অবসর কাটানোর বড় জায়গা রমনা পার্ক এখনো খোলেনি। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী ও দর্শনার্থীরা।

পার্ক দেখভালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনায় তিনি শুনেছেন, করোনার কারণেই পার্ক বন্ধ রাখা হয়েছিল। পার্কটিতে অনেকেই সকালে হাঁটাহাঁটি করেন অবসর কাটান। তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে পার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

রমনা পার্কের আয়তন প্রায় ৬৮ দশমিক ৫ একর। স্বাভাবিক সময়ে দিনভর প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকে পার্কটি। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সেদিন থেকেই পার্ক বন্ধ। পার্কটি এখনো বন্ধ রাখাকে ‘খোঁড়া যুক্তি’ বলে মন্তব্য করছেন পার্ক ব্যবহারকারীদের অনেকেই। তাদের ভাষ্য, সরকার সব অফিস খুলে দিয়েছে। ট্রেনে-লঞ্চে সব আসনপূর্ণ করে মানুষজন যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে, বাজারে কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তাহলে পার্কটি খুলে দেওয়া হবে না কেন? বাধা কোথায়?

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুলও রমনা পার্কে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করেন। তিনি প্রাতঃভ্রমণকারীদের নিয়ে গঠিত ‘কিছুক্ষণ’ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, রমনা পার্কে যারা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করতেন, তারা এখনো পার্কের সামনে আসছেন। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে পার্কের বাইরে, হেয়ার রোড, বেইলি রোডসহ অন্য সড়কে হাঁটছেন। তবে নারীরা বেশ বিপাকে আছেন। তারা হাঁটার পর বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকালে ৩ ঘণ্টা হাঁটার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে।

১৬ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পার্ক ব্যবহার না হওয়ায় হাঁটার পথে শেওলা জমেছে। সেখানে চলছে ঘষামাজার কাজ। দীর্ঘদিনের জমে থাকা গাছের পাতা ও আবর্জনা অপসারণ করতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিয়মিত পার্কে হাঁটাহাঁটি করতেন। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হয়। ঘরে বসে থেকে এই মানুষগুলো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, করোনার কথা বলে পার্ক বন্ধ রাখা একদম খোঁড়া যুক্তি। পার্কের চেয়ে বেশি ভিড় হয় হাটবাজার, যানবাহনে। আর রমনা তো অক্সিজেন ফ্যাক্টরি, নিরাপদ দূরত্বে হাঁটার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধনে রমনা পার্কের ভেতর কাজ করছে গণপূর্ত অধিদফতর। গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে ৯ মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ।

গণপূর্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, ‘ঢাকাস্থ রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে পার্কের ভেতর ১৫ ধরনের কাজ করা হবে। এগুলোর মধ্যে আছে লেক পুনঃখনন, সিরামিকে আবৃত ফুটপাত নির্মাণ, উন্মুক্ত কফি কর্নারসহ রেস্তোরাঁ নির্মাণ, শিশু কর্নারের আধুনিকায়ন, সেতু নির্মাণ, শৌচাগারের আধুনিকায়ন। এর মধ্যে শুধু সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গণপূর্ত অধিদফতরের সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও রমনা পার্কের উন্নয়নকাজের প্রকল্প পরিচালক জামিলুর রহমান বলেন, পার্ক খোলার নির্দেশনা এখনো পাননি। নিদের্শনা কে দেবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close