দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
টংক আন্দোলনের নেত্রী
রাশিমণির প্রয়াণ দিবস পালিত

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির আয়োজনে টংক ও জমিদার প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলনের অন্যতম মহীয়সী নারীনেত্রী শহীদ রাশিমণির ৭৯তম প্রয়াণ যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার বহেরাতলী গ্রামের রাশিমণি স্মৃতিসৌধ চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন হাজংমাতা রাশিমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য বিপুল হাজং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নেত্রীর স্মৃতির প্রতি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকবি সুজন হাজংয়ের সভাপতিত্বে ও নৃত্য শিক্ষক মালা মার্থা আরেং ও দোলন হাজংয়ের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ জিন্নাহ, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, কুল্লাগড়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব শাহ আলম, সাবেক উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবুল, এডভোকেট সজয় চক্রবর্তী, বিরিশিরি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এম এন আলম, কবি জন ক্রসওয়েল খকসী, কেন্দ্রীয় হাজং ছাত্র সংগঠনের সভাপতি জিতেন্দ্র হাজং, উপজেলা হাজং ছাত্র সংগঠনের সভাপতি অন্তর হাজং, রাহী হাজং সংগঠনের সভাপতি নারায়ণ হাজং, চিত্রশিল্পী রুপক হাজং প্রমুখ।
আলোচনা পর্বে আলোচকরা বলেন, সমতল ভূমির কৃষকমুক্তির আন্দোলনের রূপদানকারী হাজংদের কাছে এ দিবসটি ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। টংক আন্দোলনে তার অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য হাজংরা তাকে একজন বীরাঙ্গনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। রাশিমণি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক। হাজংদের জাতীয় জীবনে রাশিমণি একজন মহীয়সী নারী। একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় আরেকজন নারীর জীবন বলিদান ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
আলোচনার পর বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি ও আদিবাসী সংগঠনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। শেষে চিত্রাংকন ও সংগীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার বাহিনীর সৈনিকরা জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুমুদিনী হাজংকে। সেদিন রাশিমণি তাদের পথ রুদ্ধ করে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক রাশিমণি একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় জীবন দিয়েছিলেন বহেরাতুলীর মাটিতে।
"