গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গোমস্তাপুর মাতল পোসালু উৎসবে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে নবান্নের অংশ হিসেবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পোসালু উৎসব’ পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী পুনর্ভবা নদীঘেঁষা রহনপুর পৌর এলাকার বাবুরঘোন মহল্লায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। উত্তর রহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মমতাজ বেগম এই উৎসবের উদ্যোক্তা। প্রতিবছর তিনি এলাকার শিশু শিক্ষার্থী ও গ্রামের প্রতিবেশী নারীদের নিয়ে এই উৎসবটি উদযাপন করে থাকেন। নতুন প্রজন্মের সামনে নবান্ন উৎসবের বিষয়টিকে তুলে ধরতে এই পোসালু উৎসবের আয়োজন। ওইদিন এলাকাটিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।

অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের প্রিয় শিক্ষিকার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে পোসালু উৎসবে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবছর মমতাজ আপা এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তিনি গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো নতুনদের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন। তিনি এই উৎসব পালনের জন্য গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, আলু, ডিম ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। এদিকে গ্রামের নারীরা ও ছাত্রছাত্রীরা হলুদ শাড়ি পরে, হরেক রকমের ফুলের মালায় সেজে উৎসবে অংশ নেন। সকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, কবিতা পাঠ, ঘর করে গীত করে ঘুটি আনা, হাতের ওপর খোপলা নিয়ে খেলা, নদী থেকে কলসিতে করে পানি আনাসহ নানা গ্রামীণ আচার অনুষ্ঠান পালন করেন তারা। রান্নার সময় একসঙ্গে বসে গ্রামের নারীরা পিঠা ও ডিম খোসানোর সময় গীত পরিবেশন করেন।

পোসালু উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নাজরিন আকতার বলেন, এই উৎসব পালন করতে পেরে আনন্দবোধ করি। পিঠা খেতে ও বানোনো দেখতে ভালো লাগে। গীত গাইতে চেষ্টা করি। অনেক কিছু শিখতে পারি। মমতাজ ম্যাডাম পুরোনোকালের ঐতিহ্য আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলছেন। ভালো লাগছে ছোট ছোট শিশুদের কবিতা ও গজল আবৃত্তি, নাচ, গান। নদীতে কাপড় ধোয়া, কলসিতে পানি ভর্তি করে মায়েরা কীভাবে হেঁটে আসছেন। দেখতে ভালোই লাগছে। এ ছাড়া সবাই সারিবদ্ধভাবে একসঙ্গে মেঝেতে খেতে বসে অন্যরকম আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে।

নাইমা জাহান নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ম্যাডাম তাদের খেলাধুলার আয়োজন করেন। নাচে গানে সবাই আনন্দ করেছি। পোসালু কীভাবে করতে হয় তা দেখলেন ও জানলেন।

কলেজ শিক্ষক নাসিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, মমতাজ বেগম প্রতিবছর তিনি নিজ বাড়িতে এলাকার নারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরেন। তিনি উদ্দীপনার মাধ্যমে কাজ করেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ও কবি রামচন্দ্র রাজোয়ার বলেন, উৎসবে অংশ নিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরেছেন মমতাজ বেগম। ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে।

প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক সামসুল ইসলাম টুকু বলেন, আগের দিনে নতুন ধানের নতুন চালে হরেক রকম খাবার ও পিঠাপুলিতে মেতে উঠত গ্রামের মেয়েরা। তবে এখন তেমনটা দেখা যায় না। প্রতিবছর মমতাজ বেগম গ্রামবাংলার হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরে উৎসব পালন করছেন।

এ বিষয়ে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির দিকে। এসব নতুন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করেন। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তুলে ধরতে তিনি পোসালু উৎসব করেছেন। গ্রামের নারী পুরুষসহ ছাত্রছাত্রীরা তাকে এ উৎসবে সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।

এ উৎসবে অংশ নেন হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজমল হোসেন মামুন, সাংবাদিক ও লেখক সামসুল ইসলাম টুকু, কবি মোফাজ্জল হোসেন বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম মাস্টারসহ অনেকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close