মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
অতিথি পাখিতে মুখরিত গোপীনাথপুর বিল

হাজারো অতিথি পাখির কোলাহল আর কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গোপীনাথপুর বিল। শীত মৌসুমে এ বিলের জলাশয়গুলোতে আপন সাম্রাজ্য গড়ে তোলেছে অতিথি পাখিরা। এ ছাড়াও হরিরামপুরের বিভিন্ন নদনদীসহ চরাঞ্চলের জলাশয়গুলোতেও আনাগোনা বেড়েছে বাহারি রঙের অতিথি পাখির। শীতের সকাল আর সূর্যাস্তের সময় পাখির কিচিরমিচির আর জলে ডানা ঝাপটানো শব্দে মুখর থাকে গোপীনাথপুর বিল।
সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া বা পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত ও ভারি তুষারপাতের কারণে পাখির টিকে থাকা দায়। তাই একটু উষ্ণতার খোঁজে এবং নিজেদের রক্ষা করতে পাখিরা সাত-সমুদ্র-তেরো নদী পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। সাধারণত মাঘ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে অতিথি পাখির বিচরণ দেখা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের খাল-বিলসহ পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চর ও বিভিন্ন জলাশয়ে অতিথির পাখির আনাগোনা ও কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গোপীনাথপুর বিলে বালিহাঁস, সরাল, পানকৌড়ি, সাদা বক, ডাহুক, কাদাখোঁচা, শামুকখোল, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও অতিথি পাখির আপন সাম্রাজ্য গড়ে তোলেছে। সকাল-সন্ধ্যা বিলের পানি ও কচুরি পানায় খেলাধুলা আর দুষ্টামিতে সময় পার করছে পাখিরা। আবার কখনো কখনো দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সারাদিন পানিতে খেলাধুলা, দুষ্টামি, গোসল শেষে রোদে শরীর শুকিয়ে সন্ধ্যারাতে চলে যায় আশপাশের বড় বড় গাছের ডালে নিরাপদ অশ্রয়ে। আবার ভোর হলেই ফিরে আসে গোপীনাথপুর বিলসহ বিভিন্ন নদনদী বা জলাশয়ে।
গোপীনাথপুর এলাকার কৃষক আতাউর রহমান জানান, ‘পোগীনাথপুর বিলের পাশে আমি পেঁয়াজ আবাদ করেছি। সকাল-বিকেল ক্ষেতে কাজ করতে যেয়ে বিলের মধ্যে অনক ধরনের পাখি দেখতে পাই। শীতের সকালে এতো পাখি দেখে অনেক ভালো লাগে। ক্ষেতে কাজের সময় পাখির কিচিরমিচির শব্দে মন জুড়িয়ে যায়। আর বিকেল হলে ছোট পোলাপানরা পাখি দেখতে চলে আসে।’
স্থানীয় ডেগিরচর এলাকার সাব্বির হোসেন জানান, ‘বিকেল হলে পাখি দেখতে চকে আসি আর পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করি। ক্ষেতের পাশে বিলে বিভিন্ন রঙের পাখি দেখে মন ভরে যায়। কি সুন্দর করে পাখিরা ডাকাডাকি করে। সারাদিন বিলে খেলাধুলা করে, দুষ্টামি করে। বিলে মাছ ধরে খায় আর বিলেই গোসল করে রোদে শরীর শুকায়। সন্ধ্যার আজানের পর এলাকার বড় বড় গাছে গিয়ে ঘুমায়।’
পাখি দেখতে আসা রিফাত মিয়া জানান, ‘এমনিতে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল আর সূর্যাস্ত দেখতে ভালো লাগে। তারমধ্যে বিলের মধ্যে একসঙ্গে এতো পাখি দেখতে কার না ভালো লাগে। শীতের সময় পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাই। তবে পোগীনাথপুর বিলের মতো এতো পাখি আশপাশের কোথাও দেখা যায় না।’
হরিরামপুর থানার ওসি মো. মুমিন খান জানান, ‘অতিথি পাখি নিধন আইনগত অপরাধ। যদি কেউ পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া পাখিরা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং পাখি শিকার করা পরিবেশের জন্য হুমকি। অতিথি পাখিরা মুক্তমনে খালে-বিলে, হাওর-বাওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর রয়েছে।’
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ-নুর আহমেদ জানান, ‘শীতকালে দেশি ও অতিথি পাখিরা ফসলি জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এতে করে কৃষকের অনেক উপকার হয়। তাছাড়া পাখির বিষ্ঠা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার হয়। আসলে পাখি কৃষকের বন্ধু হিসেবে, সারাবছর উপকার করে থাকে। আবার পরিবেশ রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।’
"