এসএইচ জাহিদ, শাবি
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অনাগ্রহী শাবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার যুক্ত হয়। তবে টানা তিনবার গুচ্ছের দীর্ঘমেয়াদি ভর্তি প্রক্রিয়া, ফাঁকা আসন পূরণে জটিলতা, কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না পাওয়া, প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড বজায় না থাকাসহ
নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। এতে করে শাবি তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, এখনই সঠিক সময় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু করার।
বিশ্ববিদ্যালয়সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল একযোগে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শুরু হয় শাবিপ্রবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। এর ছয়মাস পর গত ৩ নভেম্বর ৮০টি আসন ফাঁকা রেখেই শুরু হয় প্রথম বর্ষের পাঠদান কার্যক্রম। অন্যদিকে, গুচ্ছ প্রক্রিয়ার জটিলতায় গত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৬২টি ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও ১০৮টি আসন ফাঁকা রেখে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে হয় শাবিপ্রবি প্রশাসনের।
গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আবু সাঈদ আরেফিন খাঁন সাংবাদিকদের জানান, গত ৩ নভেম্বর ৮০টি আসন ফাঁকা রেখেই শাবিপ্রবির প্রথমবর্ষের পাঠদান শুরু হয়। পরবর্তীতে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করায় বর্তমানে ফাঁকা আসন সংখ্যা ১০৫টি। নিয়মিত কেউ না কেউ ভর্তি বাতিল করার ফলে এ সংখ্যা বাড়তে কমতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ওয়েটিং লিস্ট থেকে নতুন করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হচ্ছে। গুচ্ছ কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারব। এরমধ্যে যতগুলো ফাঁকা আসন যা পূরণ করা যায় করবো। গুচ্ছের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিল রেখে পরিক্ষা ও ভর্তি নেওয়ার ফলে এ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয় বলে মন্তব্য করেন ভর্তি কমিটির এই সদস্য।
গুচ্ছের এসব জটিলতার বিষয় উলে¬খ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন বলেন, “গুচ্ছের সবার জন্য একই প্রশ্ন। এখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের মত করে শিক্ষার্থীদের যাচাই করতে পারছিনা। এতে তুলনামূলক কম মেধাবী শিক্ষার্থী পাচ্ছি। শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা যে মানের ছিল, গুচ্ছতে সেটি হচ্ছেনা। আমাদের প্রশ্নপত্রে প্রয়োগিক, বিশে¬ষণী দক্ষতা ও সৃজনশীল স্ট্যান্ডার্ড বজায় ছিল। এতে প্রকৃত মেধাবীদের বাছাই করা সহজ ছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নোত্থানের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সহায়ক হলেও শাবিপ্রবির জন্য তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গুচ্ছে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবিতে ভর্তির আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন।”
শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “শাবি শিক্ষক সমিতি সভায় গুচ্ছ প্রক্রিয়া না থাকার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সিদ্ধান্তের অফিসিয়াল নোটিশ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পোঁছে দিয়েছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “গুচ্ছের সিকিউরিটিসহ নানা লিমিটেশনগুলো মাথায় রেখে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে আমরা গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেটা আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। এখন তাদের বাকী পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছি আমরা।”
"