দক্ষ জনবল তৈরিতে নানা কর্মসূচি এনএসডিএর
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আওতাধীন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) কাজ করছে। দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন, চাহিদাসম্পন্ন পেশার কোর্স, কারিকুলাম ও কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি এবং অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনার পর দক্ষতা সনদ প্রদান এনএসডিএ-এর অন্যতম প্রধান কাজ।
প্রায় ১৭ কোটির বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধা ভোগ করছে। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি থাকলে দেশ ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালে অবস্থান করে। এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ইউএনডিপি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এ দেশের কর্মক্ষম জনশক্তি ১০ কোটি ৫৬ লাখ যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের পেশায় দক্ষ করা গেলে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের পূর্ণ সুফল ভোগ করতে সক্ষম হবে।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) প্রতিষ্ঠা : দেশের বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এনএসডিএ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮-এর ম্যান্ডেট অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ভিশন নিয়ে গঠিত এনএসডিএ-এর উল্লেখযোগ্য কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে: জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন; সরকারি এবং বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন প্রশিক্ষণ পাঠক্রম প্রণয়ন এবং তাদের বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার পূর্বাভাস সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ এবং খাতভিত্তিক দক্ষতা তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠা করা; দক্ষতা উন্নয়ন-সংক্রান্ত সকল প্রকল্প ও কর্মসূচি পরিবীক্ষণ ও সমন্বয় সাধন, প্রশিক্ষণ মান উন্নয়ন, সনদায়ন ও পারস্পরিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা; শিল্প দক্ষতা পরিষদ বা আইএসসি গঠন করে শিল্প সংযুক্তিকরণ শক্তিশালী করা; দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন করা; দক্ষতা কার্যক্রমের প্রচার প্রসারের মাধ্যমে যুবসমাজকে দক্ষতা প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত করা; এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে স্বীয় বিবেচনায় কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা।
২. অদ্যাবধি এনএসডিএ গৃহীত কার্যক্রম
নবগঠিত এনএসডিএ কর্তৃক কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্পিত কার্যাদি সম্পন্নের লক্ষ্যে ১৩টি গাইডলাইন প্রণীত হয়েছে। এছাড়া, উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে:
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি (এনএসডিপি) ২০২২ : ইতোমধ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি (এনএসডিপি) ২০২২ প্রণীত হয়েছে যা ২০২২-২০২৭ মেয়াদে কর্মপরিকল্পনা অনুসারে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি (এনএসডিপি) ২০২২-এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ: চাহিদাভিত্তিক, নমনীয় এবং সংবেদনশীল দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; যোগ্যতা কাঠামো তৈরির মাধ্যমে পেশার আদর্শমান নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণের গুণগতমান নিশ্চিত করা; দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য গ্রহণযোগ্য, একক ও অভিন্ন জাতীয় সনদায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা ২০২২-২৭: ইতোমধ্যে প্রণীত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, ২০২২ বাস্তবায়নে ২০২২-২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ফ্রেশ-স্কিলিং, রি-স্কিলিং, আপ-স্কিলিং, শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ, পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ৮৬ লক্ষ বিভিন্ন পেশায়/অকুপেশনে প্রশিক্ষিত ও সনদায়িত হবে। পদ্ধতিতে প্রায় ত্রিশ হাজার প্রশিক্ষক তৈরি হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
ন্যাশনাল স্কিলস পোর্টাল : খাতভিত্তিক দক্ষতা তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যাশনাল স্কিলস পোর্টাল (NSP) তৈরি করা হয়েছে যাতে কর্মসংস্থানের চাহিদা ও যোগানের রিয়েল টাইম ডাটা, অনলাইন দক্ষতা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন, কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন, পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি, প্রশিক্ষণার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট ও সনদায়নের তথ্যসহ গ্রাজুয়েট ট্র্যাকিং, শিক্ষানবিশ ও আইএসসি-সংক্রান্ত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জাতীয় দক্ষতা যোগ্যতা কাঠামোর সঙ্গে দক্ষতা সেক্টরের সমন্বয় : প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন, সনদায়ন ও পারস্পরিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোয় দক্ষতা সেক্টরকে অন্তর্ভুক্তপূর্বক এনএসডিএ এক থেকে ছয় স্তরে দক্ষতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন, প্রশিক্ষণার্থী অ্যাসেসমেন্ট ও সনদায়ন কার্যক্রম: এনএসডিএ-এর অন্যতম কাজ দক্ষতা প্রদানকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (এসটিপি) নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণান্তে অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা। এনএসডিএ-এর আওতায় ইতোমধ্যে ৯৩০টি দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২৪টি প্রতিষ্ঠানকে কোর্স পরিচালনার অনুমোদন এবং ৭৯৪টি টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল : এনএসডিএ-এর সুপারিশক্রমে বারো ক্যাটাগরিতে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল হতে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রয়োজনের নিরিখে অবকাঠামো, ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতি, উপকরণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এবং দক্ষতা বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্য ব্যক্তি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করছে।
গবেষণা পরিচালনা : চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং অন্যান্য সম্ভাব্য পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গবেষণা, জরিপ ও সমীক্ষার মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ দক্ষতার চাহিদা নিরূপণ, স্কিলস গ্যাপ নির্ধারণ এবং দক্ষতা চাহিদার পূর্বাভাস প্রদান করার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে।
দক্ষতার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি : সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা জরুরি। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারগণের জন্য ওয়ার্কশপ, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও টক শো আয়োজন এবং টেলিভিশন কমার্সিয়াল (টিভিসি) নির্মাণ করে প্রচারের মাধ্যমে দক্ষতা প্রশিক্ষণকে জনপ্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
"