বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়া পৌরবাসীর
পাবনার বেড়া পৌর এলাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে থাকায় পুরোপুরি বন্যামুক্ত। কিন্তু বন্যামুক্ত হলেও এ পৌরসভার বাসিন্দাদের প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বৃষ্টিতে জমা নোংরা পানিতে পৌর এলাকার কিছু রাস্তাসহ অসংখ্য বাড়িতে দিনের পর দিন জলাবদ্ধতা থাকে। এতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই আক্রান্ত হন নানা রোগে। এবার বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের দুর্ভোগ আরও প্রকট হয়েছে।
পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে জানান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাই ২৩ বছর বেড়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এর পর ২০২১ সালে টুকু পুত্র আসিফ শামস্ রঞ্জন বেড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু এত বছরেও কোন মেয়ই পৌরসভার বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার স্থায়ী কোন প্রকল্প হাতেই নেননি। তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করতে ব্যস্ত ছিলেন।
পৌরবাসী ও পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের আগে বেড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্রতিবছর বন্যার পানিতে প্লাবিত হতো। ১৯৯০ সালের দিকে বেড়া পৌর এলাকার উত্তর ও পূর্ব দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ হওয়ার পর বেড়া পৌর এলাকা বন্যামুক্ত হয়। কিন্তু এরপর দেখা দেয় নতুন আরেক দুর্ভোগ। বাঁধ নির্মাণের কারণে পৌর এলাকার পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হতে থাকে জলাবদ্ধতা।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, বেড়া পৌর এলাকার বেশির ভাগ এলাকা নিচু। বর্ষাকালে পৌর এলাকার বৃষ্টির পানি হুরাসাগর নদ হয়ে নিষ্কাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্ষায় হুরাসাগর নদের পানির উচ্চতা পৌর এলাকার জমে থাকা পানির উচ্চতার চেয়ে বেশি হওয়ায় পানিনিষ্কাশিত হতে পারে না। এই বেড়া পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় ২০০৫ সালে। প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার ১৯ বছর পরও এ পৌরসভায় সুষ্ঠু পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তবে পৌর এলাকায় প্রচুর নর্দমা ও রাস্তা নির্মিত হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে এগুলো নির্মিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা না কমে বরং বছর বছর তা বেড়েই চলেছে। এবারের বর্ষায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা মারাত্মক রূপ নেওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই পৌরবাসীর।
এলাকাবাসী আরও জানান, দীর্ঘদিন বেড়া পৌর এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কার কাজ না হওয়ায় এলাকার অনেক মহল্লার রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এসব রাস্তা দিয়ে রিকশা, ভ্যানে করে অনেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগের স্বীকার হয়ে থাকেন। বিশেষ করে বেড়া ডাকবাংলা থেকে সিএন্ডবি (বেড়া বাসস্ট্যান্ড) পর্যন্ত প্রায় ১ থেকে দেড় কিলোমিটারের অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙ্গা। যে কারণে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধাতার সৃষ্টি হচ্ছে যা জনগণের দুর্ভোগের কারণ বলে মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সানিলা, শেখপাড়া, বনগ্রাম, চরপাড়া, সান্যালপাড়া, শাহপাড়া, হাতিগাড়া, বরশিলা, মৈত্রবাঁধা, জোড়দহসহ বেশির ভাগ মহল্লায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতায় অনেকের বাড়ির উঠানে, এমনকি ঘরের ভেতরেও জমে রয়েছে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোও ডুবে রয়েছে পানিতে।
বেড়া বাজার সংলগ্ন বেড়া গুড়পুট্টি কালীবাড়ীতে বসবাস করেন ১০-১২টি পরিবার বর্ষ মৌসুমে বৃষ্টি হলেই বাড়িঘরে উঠে পড়ে পানি, এতে ভোগান্তির শেষ থাকে না এসব পরিবারের।
শেখপাড়া মহল্লার মালতী খাতুন, নাজির শেখ, ফুলমালা খাতুনসহ সাত-আটজন জানান, ঘর থেকে নামলেই নোংরা পানি। যাতায়াত করতে হলে এই পানি এড়ানোর কোনো উপায় নেই। এই পানি দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে তাঁদের বাড়ির প্রায় সবার শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
বেড়া পৌরসভার বর্তমান দায়িত্বরত বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বেড়া পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আইনের মধ্যে থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা করা হবে। পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা যাতে স্থায়ী সমাধান হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাড়াশে অপরিকল্পিত অবৈধ পুকুর খননে সৃষ্ঠ জলাবদ্ধতায় প্রায় তিন হাজার বিঘা ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এ জলাবদ্ধতায় নিরসনের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। পরে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমার কাছে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন ৫টি গ্রামের শতাধিক ভূক্তভোগী কৃষক।
"