বগুড়া প্রতিনিধি
নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র
মসলা ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে মসলার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে কাজ করছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র। ছয় বছর আগে ৮ হাজার কোটি টাকার মসলা আমদানি হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন, উৎপাদন প্রক্রিয়া। পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবিলায় স্বল্পসময়ে অধিক উৎপাদনক্ষম উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন জাত, উৎপাদন পদ্ধতি ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে কাজ করছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র।
জানা গেছে, মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানি নির্ভরতা কমাতে শিবগঞ্জে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মসলা গবেষণা কেন্দ্র পরের বছর থেকে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্রটি বহুমুখী উদ্ভাবনে তাক লাগিয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো মূল্যবান ফসল ভেনিলা চাষসহ বস্তায় আদা চাষে সফল হয়েছে তারা। জিরার আবহাওয়া উপযোগী জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ কাজ চলমান। পাশাপাশি জাফরান, কালো এলাচ, গোলমরিচসহ অন্যান্য মসলার বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়েও গবেষণা করছেন কর্মকর্তারা। গবেষণায় উদ্ভাবিত উন্নত নতুন জাত চাষাবাদে মসলার উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি হবে, এতে আমদানি নির্ভরশীলতা কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা। ডিজিটালাইজেশনের যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে মসলার গবেষণা। গবেষণা কেন্দ্রটিতে ৪৬টি দেশি-বিদেশি মসলা ফসলের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্রটিতে বৈজ্ঞানিকরা নিরলস প্রচেষ্টায় তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে গবেষণায় ৩০টি মসলা জাতীয় ফসলের ওপর ৫৭টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজের সাতটিসহ জিরা, মরিচ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, কালোজিরা, মেথী, ফিরিঙ্গি, মৌরি, আলুবোখারা, দারুচিনি, চুইঝাল, উন্নত জাত যা কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ হচ্ছে। কালো এলাচ, গোলমরিচের বাণিজ্যিক চাষাবাদসহ একাঙ্গী, ফিরিঙ্গি, পোলাও পাতা, লেমনগ্রাস, আম আদা, কাবাবচিনি, চিভস, অলস্পাইস, কারিপাতা, পান বিলাস, লবঙ্গ, পেস্তা, জয়ফলসহ বিভিন্ন মসলার জাত গবেষণাধীন এবং পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আদা-রসুনের গুঁড়া উদ্ভাবন হয়েছে এ কেন্দ্রে। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদন প্রযুক্তি, মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, পোস্ট-হারভেস্ট প্রযুক্তিসহ আরো ১৫৬টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। সর্বশেষ মূল্যবান মসলা ফসল ভেনিলা চাষে সফল হয়েছে, জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে এ কেন্দ্রের গবেষকরা। বস্তায় আদাচাষেও এসেছে সফলতা, জিরার উন্নত জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গাবতলীর কৃষি উদ্যোক্তা নুরুল ইসলাম জানান, মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ফসল চাষে কৃষক যেমন লাভবান হবেন তেমনি মসলা ফসলের উৎপাদন বাড়বে। তিনি বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হয়েছেন, এ বছর সাড়ে ১২৩ হাজার বস্তায় চাষ করেছেন। মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি প্রতিনিয়ত পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছেন।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. মাহমুদুল হাসান সুজা জানান, মসলাজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে তারা কাজ করছেন। কালো এলাচ চাষে গবেষণা চলছে, হাত দিয়ে পরাগায়নে সফলতা আসলে চাষাবাদ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা. ড. মো. জুলফিকার হায়দার প্রধান জানান, মসলার নতুন নতুন জাত আসছে যা কৃষক পর্যায়ে চাষ হচ্ছে, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ বৃদ্ধি করায় আমদানি ব্যয় কমেছে। দেশে প্রতি বছর সাড়ে ৬০ লাখ টন মসলার চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে সোয়া ৬ লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৫১ লাখ টনের বেশি মসলা। আগামীতে মসলা চাষাবাদ বৃদ্ধি হলে আমদানি ব্যয় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
"