ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
হলে বারবার বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
একাধিকবার সংস্কার করা হলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না * বারবার আগুন লাগলেও প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই * সংস্কারের নামে জোড়াতালি দেওয়ার অভিযোগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলে বারবার বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। আতঙ্কে হলের শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে হলে থাকতে হচ্ছে তাদের। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় এই সমস্যার সংস্কার করা হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে দ্রুত স্থায়ী সংস্কারের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় শর্টসার্কিট কারণে আগুন লাগে। এতে আতঙ্কিত হয়ে চার শিক্ষার্থীর অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৭ জুলাই আনুমানিক রাত ১০টায় একই ঘটনা ঘটে। পরে কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন। পরের দিন সকালে আবার শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে। এরপর গত ১০ জুলাই আবারও একই সমস্যা হলে ওই দিন পুরো রাত বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যাম্পাস খোলার পর শিক্ষার্থীরা হলে আসতেই না আসতেই গত দুই সেপ্টেম্বর আবারও শর্টসার্কিটের সমস্যা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের এরই মধ্যে ডরমেটরিতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার সমস্যাটির সমাধান করা হলেও প্রশাসন স্থায়ী কোনো সমাধান দিচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই হলের পুরোনো ব্লকে বরাবরই ছোট-বড় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ জুলাই মাসে বড় দুর্ঘটনার পর তিনতলা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামত করার কথা থাকলেও দুইতলা পর্যন্ত করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় মেরামতের নামে শুধু জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। বারবার আগুন লাগলেও ইবি প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে এমন মশকরা করা হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে হলে অবস্থান করছি।
শিক্ষার্থীরা সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত হলে প্রতিনিয়ত দুজন ইলেকট্রিশিয়ান রাখতে হবে, স্থায়ীভাবে ঠিক করতে কত সময় লাগবে ও হলের বাজেট ব্যয় সংক্রান্ত স্বচ্ছ হিসাব শিক্ষার্থীদের কাছে পেশ করতে হবে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তাসলিমা আরেফিন অথি বলেন, আমাদের সঙ্গে এই দুই মাস ধরে মশকরা করা হচ্ছে, প্রভোস্ট আগেই হল থেকে বিদায় নিয়েছেন যাতে তাকে প্রশ্ন না করা যায়। আমাদের জীবনের মূল্য কী এতই তুচ্ছ, মেয়েরা আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারে না। বারবার আগুন লাগলেও ইবি প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও হল প্রশাসন সূত্রে, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকের ভবন। এই হলটার বয়স প্রায় ৩০ বছরের মতো হবে। সেখানে যে ধরনের লোড পড়ে লাইনগুলো তেমন শক্তিশালী নয়। তাছাড়া লাইনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ার কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। সেখানে পুরো লাইন মেরামত করা জরুরি। এর জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন।
হলটির আবাসিক শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন, হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবেন। ঝুঁকি আছে কি না, এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করব না। ইঞ্জিনিয়াররাই এটা ভালো বুঝবেন বলে দাবি তার।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, হলে কিছু তারের লুস কানেকশনের জন্য এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। ছাত্রীদের দাবি অনুযায়ী হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবে। আপাতত ভয়ের কিছু নেই। তাছাড়া আমরা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কত টাকা লাগতে পারে এই নিয়ে একটা এস্টিমেট করছি। এস্টিমেট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। আর্থিক অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী জানান, সার্ভিসিং করতে কেমন বাজেট লাগবে সেটা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের বলা হয়েছে। খুব দ্রুতই স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছি।
"