কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মজুরি প্রদানের দাবি চা শ্রমিক সংঘের
![](/assets/news_photos/2024/09/08/image-474478.jpg)
চা শ্রমিকদের সরকার ঘোষিত মজুরি অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে চা শ্রমিক সংঘ। চা শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল অলমিক এক যুক্ত বিবৃতিতে অভিযোগ করেন সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি অনুযায়ী গত ১১ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৭৮.৫০ টাকা প্রদান করার প্রজ্ঞাপন থাকলেও চা বাগান কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। তারা আগের মতো দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি পরিশোধ করছেন।
নেতারা বলেন, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড চা শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন (এসআরও নং ২৪৬-আইন/২০২৩) জারি করে। প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলির ৮(খ) নং পয়েন্টে উল্লেøখ করা হয়েছে ‘যদি একজন শ্রমিকের মূল মজুরি ১৭০ টাকা হয়, তবে এক বৎসর কর্মরত থাকিবার পর তাহার মজুরি বৃদ্ধি পাইয়া ১৭৮.৫০ টাকা নির্ধারিত হইবে এবং পরবর্তী বৎসরে ক্রমবর্ধমান হারে পুণরায় ৫% হারে বৃদ্ধি পাইবে অর্থাৎ মূল মজুরি ১৭৮.৫০ টাকার ৫% বৃদ্ধি পাইয়া ১৮৭.৪৩ টাকা নির্ধারিত হইবে।’ সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ আগস্ট থেকে একজন চা শ্রমিকের মজুরি ১৭৮.৫০ টাকা হলেও চা বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারি আইন ও প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে ১৭০ টাকা করে মজুরি পরিশোধ করছেন। এমনকি আলীনগর, সুনছড়া, শমসেরনগর, রাজনগরসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৭৮.৫০ টাকা মজুরি পরিশোধ করার অনুরোধ করলেও বাগান কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি প্রদান করা না হলে আসন্ন দুর্গাপূজায় উৎসব বোনাসের ক্ষেত্রেও চা শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নেতারা অবিলম্বে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দৈনিক ১৭৮.৫০ টাকা মজুরি বকেয়াসহ পরিশোধ করার দাবি জানান। একই সঙ্গে চা ও রাবার শ্রমিকদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ-পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল/আটা, ডাল, তেল, চিনি/গুড়, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান করার দাবি জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকদের ঠিকমতো মজুরি ও রেশন পরিশোধ না করা হচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এনটিসি কোম্পানির কুরমা, পাত্রখোলা, মাধপুর, মদনমোহনপুর, দেউন্দি টি কোম্পানির নয়াপাড়া, দেউন্দি, লালচাঁন, মৃত্তিঙ্গা, ব্যক্তিমালিকাধীন ইমামণ্ডবাওয়ানী, ফুলতলা, সিলেটের ডালুছাড়া, তারাপুরসহ বিভিন্ন বাগানে মজুরি ও রেশন পরিশোধ না করার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা-বাগানের কর্তৃপক্ষ আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বেআইনিভাবে বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন। নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে মজুরি ও রেশন পেয়েও শ্রমিকরা দুবেলা ডাল-ভাত জুটাতে পারেন না। তার ওপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না। তারা অবিলম্বে চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং ফুলতলাসহ বন্ধ সব বাগান চালু করার দাবি জানান। অন্যথায় চা শ্রমিকরা বেঁচে থাকার তাগিদে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের আন্দোলনের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাবি ও অধিকার আদায় করার পথে অগ্রসর হতে বাধ্য হবেন।
"