আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘বিদ্যালয় হোক সব শিশুর নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল’

সরকারি তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ৯৭ দশমিক ৯৭ ভাগ শিশু স্কুলে ভর্তি হয়। ২ ভাগ শিশু এমনিতেই ভর্তি হয় না। তারপর ঝরে পড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। ৮ জন শিশুর ১ জন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে পারে না। নিঃসন্দেহে এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭, যা মোট শিশুর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আক্কেলপুর উপজেলায় ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ১ শতাংশ। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ কর্মজীবী। এই শিশুরা বেলুন কারখানায়, অ্যালুমিনিয়ামের বাটি, গ্যাস কারখানায়, তৈজসপত্র তৈরিতে, মুদি দোকানে, গাড়ির গ্যারেজে, রেস্টুরেন্টে ও ছোট ছোট কারখানায় কাজ করে। আবার এদের মধ্যে কেউ প্লাস্টিকের বোতল কুড়াচ্ছে, কেউ ময়লা কুড়াচ্ছে আবার কেউ কিছুই করছে না। আক্কেলপুর রেলস্টেশনের পাশে একটি ছেলে বাদাম বিক্রি করছিল। তাকে বললাম, স্কুলে যাও, বাদাম কেন বিক্রি করো? সে বলেছিল, বাদাম বিক্রি করে দিনে ৩০০ টাকা আয় হয়, স্কুলে গেলে কি দিনে ৩০০ টাকা আয় হবে?

এই বিষয়গুলো পীড়াদায়ক। এটা সত্য ঝরে পড়া শিক্ষার্থী পুনরায় স্কুলে নিয়মিত করা দুরূহ কাজ তবে আর কোনো নতুন ছাত্রছাত্রী যেন ঝরে না পড়ে এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ৫০ জন করে নারী অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ যাবৎ ১১টি বৈঠক সম্পন্ন করা হয়েছে। যেসব স্কুলে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রী বেশি পরিলক্ষিত হয় এমন ১৩টি স্কুল চিহ্নিত করে প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিয়ে সভা করা হয় এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা সমাবেশ করা হয়।

গরিব ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও ইউনিফর্ম বিতরণ করা হয়। উপবৃত্তির টাকা যেন শিশুর শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয় এ মর্মে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। একটি স্কুলে মিড ডে মিল চালু এবং অন্যান্য স্কুলে মিল চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান করা হয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থী আধিক্যপ্রবণ স্কুলগুলোর তালিকা তৈরি এবং প্রধান শিক্ষকদের ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে সুচাররূপে শিশু জরিপ করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলে নিয়মিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে গরিব অভিভাবকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। অধিকাংশ স্কুলে অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য শিক্ষকদের গ্রুপভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করা হয়।

উপর্যুক্ত উদ্যোগগুলোর ফলে উল্লেখযোগ্য হারে উন্নতি না হলেও পূর্বের তুলনায় উন্নতি হয়েছে তা নিসন্দেহে বলা যায়, কারণ ২০১৫ সালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে এসে তা কমে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয় এবং এই উদ্যোগগুলো গ্রহণের পরে তা দাঁড়ায় ১ শতাংশতে। তবে শিক্ষক, সুধীজন এবং অবিভাবক অধিকাংশের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে ঝরে পড়া রোধে যদি প্রকল্পের পরিবর্তে কর্মসূচিভিত্তিক কার্যক্রম যেমন- ‘মিড ডে মিল’ সর্বজনীন করা এবং উপবৃত্তির টাকা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০০ টাকা বা ততোধিক করা যেত তাহলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close