বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
অভিযুক্ত সাইনবোর্ড সর্বস্ব ৮ দোকানে তালা
বেনাপোল চেকপোস্টে টাকা ছিনতাই : যাত্রীরা রাতে বাস থেকে নামার পর বন্দরের বাস টার্মিনাল এবং প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থেকে পাসপোর্ট ফরম ও ভ্রমণ কর কেটে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে ছিনতাইকারীরা * আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও মিলছে না কোনো প্রতিকার * এসব চক্রকে নানাভাবে সহযোগিতা করে নামধারী কিছু সাংবাদিক, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজন
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট টার্মিনাল এলাকা থেকে যাত্রীদের টাকা ছিনতাই থামছেই না। এটা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ালেও প্রশাসনের কর্তারা রয়েছে নিশ্চুপ। তবে পুলিশ বলছে, এর আগে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ও ভ্রমণ ট্যাক্স জালিয়াতির ঘটনায় চেকপোস্ট এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ১০টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আবারও প্রতারণার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
গত সোমবার দুপুরে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় আটজন বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীর কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বেনাপোল চেকপোস্টের একটি মার্কেটের গলি থেকে দুজন যাত্রীর ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে স্থানীয় বিজিবি, বন্দর ও বাজার কমিটি। ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় বাকি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ, চেকপোস্ট বাজার কমিটি ও পরিবহন সমিতি মিলে ছিনতাইকারীদের নাম সর্বস্ব সাইন বোর্ডবিহীন অভিযুক্ত ৮টি অবৈধ দোকানে তালা ঝুলিয়েছে পুলিশ। এছাড়া আরো ৪টি দোকান মালিককে সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত ছিনতাইকারীরা হলেন চৌধুরী সুপার মার্কেটের রবি, সাইদুর সুপার মার্কেটের বাবুল, রেজাউল সুপার মার্কেটের হামিদ, ইউনুস সুপার মার্কেটের বরিশালের শামীম, রবি, সয়েব, ইবাদত, হৃদয়, শিমুল, ইমরান ও মারুফ।
স্থলপথে ভারত যাতায়াতের সহজ ও প্রধান পথ হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। চিকিৎসা-ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে বেনাপোল বন্দর হয়ে সবচেয়ে বেশি পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে ভারতে। যাত্রীরা রাত ৩টার দিকে বাস থেকে নামার পর বন্দরের বাস টার্মিনাল এবং প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থেকে তাদের পাসপোর্ট ফরম ও ভ্রমণ কর কেটে দেওয়ার কথা বলে কিছু চিহ্নিত ছিনতাইকারী। এরপর বিভিন্ন অলিগলিতে বসিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার নম্বর অ্যান্ট্রির কথা বলে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের আশপাশে গোপনে বসে থাকে দালাল পরিচয়ের ছিনতাইকারীরা চক্রের সদস্যরা। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের টার্গেট করে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে তারা বিভিন্ন মার্কেটের গলিতে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে টাকা ছিনতাই করছে। এ ছিনতাইকারীদের ভয়ে স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ তারা দলে অনেক ভারী। আর এসব চক্রকে নানাভাবে সহযোগিতা করে নামধারী কিছু সাংবাদিক, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজন এবং অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়া খুলনার সাগর হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ভারতে গমনের উদ্দেশে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে কয়েকজন লোক তাকে বলে, অনলাইনে ভ্রমণ ট্যাক্স জমা দিলে তারা বন্দরের লম্বা লাইনের আগে ইমিগ্রেশনে পৌঁছে দেবে। পরে তাকে পাশের একটি মার্কেটের গলিতে কম্পিউটারের দোকানে বসায়। সেখানে তার কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে বন্দর ও বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় ৭ হাজার টাকা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে পাশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘোরাফেরা করলেও তারা কিছুই দেখে না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরে নিয়োজিত আর্মস ব্যাটালিয়নের ওসি বাদল চন্দ্র জানান, পাসপোর্টযাত্রীদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা দুঃখজনক। এ রকম ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। পরে ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয়। বন্দর এলাকায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আরো কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত জানান, প্রতিদিন নানা কৌশলে পাসপোর্টধারীদের জিম্মি করে ছিনতাই করে আসছিল প্রতারক চক্ররা। এ ধরনের প্রতারকদের ৮টি অবৈধ প্রতিষ্ঠানে তালা মারা হয়েছে। এছাড়া অন্যদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে বহুবার ছিনতাইকারীদের প্রতিষ্ঠান তালা মেরে সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের আটকও করা হয়েছে। তবে তারা জেল থেকে ফিরে এসে আবারও সেই অপরাধ করছে। ছিনতাই পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে পুলিশকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের সহযোগিতা করতে হবে। আর যাত্রীদের ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।
"