নিজস্ব প্রতিবেদক ও জবি প্রতিনিধি
হাজী সেলিম পাঁচ দিনের রিমান্ডে
আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যার ঘটনায় লালবাগ থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন। এর আগে হাজী মো. সেলিমকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত হাজী মো. সেলিমকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তিব্বত হল (বর্তমানে গুলশান আরা সিটি) দোকানিদের মার্কেট খালি করতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
আদালতে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল ৩টার পর কড়া পুলিশ পাহারায় হাজী সেলিমকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। এরপর মাথায় পুলিশের হেলমেট ও শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত বিএনপি-সমর্থক আইনজীবী হাজী সেলিমের শাস্তি দাবি করে স্লোগান দেন।
আদালতকক্ষে হাজী সেলিম আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। এরপর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাকে আবার আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। হাজী সেলিমের হাতে পরানো ছিল হাতকড়া। এর আগে গত রবিবার মধ্যরাতে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ঢাকা-৮ আসন থেকে। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হাজী সেলিম। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজী সেলিম প্রার্থী হননি। তার বদলে ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ঢাকা-৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ওই মামলায় রায় দেন। রায়ে তার ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়।
২০২২ সালে ওই মামলায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। কিছুদিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত তাকে জামিন দেন।
হাজী সেলিমের দখল করা জবির হল ছাড়তে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। মার্কেট খালি হলেই সেটা বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেবে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া সেল। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর ওয়াইজঘাটের ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জমির ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলটি অবস্থিত। সব বাধা উপেক্ষা করে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম হলটির অবকাঠামো বদলে ফেলে ১০ তলা বিশাল ভবন নির্মাণ করে স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ গড়ে তোলেন। এরপর থেকে কয়েক দফা আন্দোলন করেও আর হলটি আয়ত্তে নিতে পারেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জবি সংস্কার মিডিয়া সেল সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিবলী সাদিক (রাজস্ব) এর ররুমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলবিষয়ক একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোতোয়ালি জোনের মেহেরুনেছা এডিসি (রাজস্ব) নেতৃত্বে এল এ শাখার সার্ভেয়ারদের একটি টিম গত রবিবার আহসান মঞ্জিলের সামনে ইসলামপুরের শুলশান আরা সিটিতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে এসেছেন। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেট খালি করে দিতে বলা হয়েছে। তিব্বত হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। নতুন জেলা প্রশাসক আসলে কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে দীর্ঘদিনের দখলদার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজী সেলিম নিজ ইচ্ছায় দখল করা জায়গা ছেড়ে না দিলে সেনাবাহিনী মার্কেট খালি করতে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে ছাত্র প্রতিনিধিদের নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। এদিকে হল ফিরে পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
"