প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
রাবি ও খুবিতে শিক্ষক অপসারণ কর্মসূচি
গণহত্যায় সমর্থন ও অনিয়ম : রাবিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুসতাক আহমেদকে অপসারণের দাবি শিক্ষার্থীদের * গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানিদাতা, দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ * খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. আবদুল জব্বারের নিয়োগ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা
গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানিদাতা, একাডেমিক পরিসরে অনিয়ম ও দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও বিভাগের ফান্ড থেকে আর্থিক কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুসতাক আহমেদকে চাকরিচ্যুত ও অপসারণের দাবি জানিয়েছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বারের অপসারণের দাবিতে আজ (রবিবার) সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুসতাক আহমেদকে চাকরিচ্যুত ও অপসারণের দাবি জানিয়েছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার রেজিস্ট্রার দপ্তর ও নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর তারা এ বিষয়ে পৃথক স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে লেখা হয়েছে, আমাদের বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপক্ষে একের পর এক বিভিন্ন উসকানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দিতে থাকেন, যা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন দমনে সরকারের পৈশাচিক গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং উসকে দেয়। এছাড়া একাডেমিক পরিসরে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অপমান-অপদস্ত করা, পরীক্ষার খাতায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, হুমকি-ধামকি দেওয়া, বিভাগের অর্থ তছরুপ করা ও নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করা, টার্গেট করে অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়াসহ তার নানা অপকর্মে ও অত্যাচারে আমাদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নি¤েœ ওনার কিছু উল্লেখযোগ্য অপকর্ম সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি : আন্দোলন চলাকালীন ১৬ জুলাই ২০২৪ মুসতাক আহমেদ বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সবাইকে ঢালাওভাবে ‘রাজাকার’ উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার উল্লেখ করে তাদের ক্লাস নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। ১৭ জুলাই সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে নৃশংস হামলাকে সমর্থন ও উসকে দিয়ে দেন।
মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা তছরুপ করেছেন। বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মুসতাক আহমেদ বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার বিষয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি বরাবর বলে আসছি কোটা পদ্ধতিই আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতার ওপর বুলেটের আঘাতে হত্যা করা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়।
আমার স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছে। কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু করব। বিভাগ তার জায়গা থেকেও ব্যবস্থা নিলে আমাদের জন্য সহজ হবে।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, এটি তো বিভাগের কিছু না। এটি এখন প্রশাসনিক কার্যকলাপ। তারপরও বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বারের অপসারণের দাবিতে গতকাল রবিবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ড. জব্বারের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় প্রথমে নিজ ডিসিপ্লিনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এরপর তারা একত্রিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে এসে মানববন্ধন শুরু করে।
শিক্ষা ডিসিপ্লিনের ২০ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ চক্রবর্তী জানান, ‘শিক্ষক হিসেবে তার যে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। তবে শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক হিসেবে তার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু তার অপসারণ নয় বরং ভবিষ্যতে যে শিক্ষক আসবেন, তিনি যেন প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা পূরণ করেই আসেন।’ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের মধ্যে স্বজনপ্রীতির কথাও উঠে এসেছে এবং তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, ড. আবদুল জব্বারের নিয়োগ বাতিল না হলে তারা ক্লাসে ফিরবে না।
"