প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ আগস্ট, ২০২৪

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

দেশ ছেড়ে কোথাও না যাওয়ার শপথ

প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাবেশ * সনাতন ধর্মের হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন * নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি * ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি

সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে গতকাল সোমবার সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালিবাড়ী হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলটি প্রেস ক্লাব গোপালগঞ্জের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। শহরের প্রধান সড়ক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন এ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় চৌধুরী পপা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক, সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার মঙ্গল চন্দ্র বিশ্বাস, প্রভাষক মনিন্দ্রনাথ বাড়ৈ মনি, সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালিবাড়ীর সভাপতি রমেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতিশ রায়, হিন্দু নেতা টিটো বৈদ্য, উজ্জ্বল বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বক্তারা সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করাসহ আট দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করাসহ হিন্দু মা-বোনদের লাঞ্ছিত করা এবং দেশ ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়। এসবের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে সম্মিলিত সংগ্রামী সনাতনী সমাজের ব্যানারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মের হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলা চত্বরে সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে অ্যাডভোকেট নিখিল দত্ত, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেব দুলাল বসু পল্টু, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রানী সরকার, শিক্ষার্থী অসিত বসু উত্তম, শুভ্র সিকদার, টিটব বাড়ৈ, স্বপন বাকচী, আশুতোষ দাস, সজল বালা, প্রণব মল্লিক, অঞ্জলী হালদার, শিপ্রা বিশ্বাস, লিপিকা দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ঝালকাঠি : সনাতন ধর্মালম্বীদের ওপর হামলা, নির্যাতনের প্রতিবাদে ও ৮ দফা দাবি আদায়ে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়। সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জেলায় বসবাসকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন। তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শহরের ফায়ার সার্ভিস মোরে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা বিভিন দাবি-দাওয়া সংবলিত প্লাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেয়। অবস্থান চলাকাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সমাবশ থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়র ওপর যে হামলা হয়ছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা এই দেশের নাগরিক। আমরা অন্য দেশে যাব না। স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। হামলাকারীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

রাঙামাটি : রাঙামাটিতে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে রাঙামাটির জেলা উপজেলা থেকে হাজার হাজার সনাতনী অংশগ্রহণ করেন। রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচারসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক মিশু দে। পরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজিত শীল ও রাজু শীল, রাধা রাসবিহারী মন্দিরের অধ্যক্ষ নিতাই নূপুর দাস ব্রহ্মচারী।

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে যেসব সংখ্যালঘু নিপীড়ন, হত্যা হয়েছে তার কোনো বিচার না হওয়ায় বারবার একটি গোষ্ঠী সনাতনীদের ওপর হামলার সাহস দেখাচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, একটি গোষ্ঠী চায় এ দেশ থেকে সনাতনীরা চলে যাক, সনাতনীশূন্য করার নীলনকশা নিয়ে তারা কাজ করছে, কিন্তু এ দেশ ছেড়ে কোনো সনাতনী কোথাও যাবে না বলেও শপথ করেন বক্তারা।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচারের দাবিগুলোতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করা, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দসহ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন, শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন সরকারি ছুটি দেওয়ার দাবি করা হয়।

এ ছাড়া আট দফা দাবিগুলোর বাইরেও পার্বত্যাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এ হিন্দু সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন করে নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হিন্দু ধর্মের অনুসারী বিভিন্ন বয়সের প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল উপজেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে এক সমাবেশে মিলিত হন। সমাবেশ থেকে বক্তারা তাদের ভাষায় সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close