নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়ক
খুঁটি রেখেই চলছে উন্নয়ন কাজ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ডেমরা-কালিগঞ্জ সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই চলছে সড়ক উন্নয়ন কাজ। খুঁটি অপসারণ নিয়ে জটিলতায় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে সর্পাকৃতির ড্রেন। এ সড়কের উপজেলার পূর্বগ্রাম থেকে রূপগঞ্জ অংশের শিমুলিয়া পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি।
রাস্তর মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এতে একদিকে যেমন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন পথচারীরা, অন্যদিকে দুর্ঘটনা শঙ্কা রয়েছে সার্বক্ষণিক। এতকিছুর পরও বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো অপসারণে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকেই। উল্টো এলজিইডি ও পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সড়ককে কেন্দ্র করে এর উভয় পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত শিল্প-কারখানা। শিল্প-কারখানার ভারী যানবাহনের চাপের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই সড়কের বেহাল অবস্থা ছিল। এতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। পূর্বে সড়কটি সরু থাকায় শিল্প-কারখানার ভারী যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো।
তাই সড়কটি প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা যায় বিদ্যুতের খুঁটি। প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের ওপর ২০০টির অধিক বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কোনোটি সড়কের দুই থেকে আড়াই ফুট আবার কোনোটি দুই পাশের পথচারী চলাচলের ফুটপাতের মধ্যে আছে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ঢাকা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (জিডিপি-৪) এর অধীনে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ডেমড়া-কালীগঞ্জ সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্তৃক ১৮ ফুট প্রস্থে পাকাকরণ ও ৬ ফুট প্রস্থে মাটি ভরাটসহ সম্পূর্ণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। এনডিই ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করছে। চলতি বছরের জুন মাসেই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়কটি নির্মাণ হলে গাজীপুর, নরসিংদী ও ঢাকার সঙ্গে রূপগঞ্জবাসীর স্থল যোগাযোগ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর, নরসিংদী দূরত্ব কমবে। এতে যানবাহনের জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি যাতায়াতকারীদের সময় বাঁচবে। কিন্তু দুই পক্ষের রশি টানাটানিতে নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
স্থানীয় অটোচালক বাবুল মিয়া বলেন, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় আমাদের এলাকার লোকদের চলাচলে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় ও দুই পাশে ফুটপাতের মাঝে ইছাঁখালি থেকে বক্তবাড়ি পর্যন্তই রয়েছে ২০০-২৫০ খুঁটি। রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় সবসময় ভয়ে ভয়ে চলাচল করি।
সড়ক পার্শ্ববর্তী ভক্তবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, রাস্তাটির উন্নয়ন করা হচ্ছে এটা ভালো খবর হলেও সড়কসহ দুই পাশে হাঁটার জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও সরানো হয়নি। খুঁটি থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ সড়কের পাশে রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের স্বপ্নদ্রষ্টা পরিবেশকর্মী ব্রাত্য আমিন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো যানবাহন ও পথচারীদের জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করছে। খুঁটি অপসারণ নিয়ে জটিলতায় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে সর্পাকৃতির ড্রেন। খুঁটি অপসারণ না করে সড়ক প্রশস্ত করলেও ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিইর প্রকৌশলী রিমন সরকার জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে না পারায় ব্যাঘাত ঘটলেও কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এমন আঁকাবাঁকা দেখাবে না।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মেহমুদ মোরশেদউল আল আমিন বলেন, খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা প্রাক্কলন ফি দাবি করে। আর আমাদের টাকা দেওয়ার মতো কোনো সংস্থান নেই। এতগুলো খুঁটি স্থানান্তর করতে মোটা অঙ্কের একটা অর্থের প্রয়োজন। সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে এই খাতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এবং পল্লী বিদ্যুৎ প্রাক্কলন ফি ছাড়া খুঁটিগুলো না সরানোর কারণে একটু জটিলতা দেখা দিয়েছে।
"