নিজস্ব প্রতিবেদক
এখনো শনাক্ত হয়নি ঢাকার ৬৯ খালের সীমানা
ঢাকার দুই করপোরেশনের মালিকানায় আছে ৬৯টি খাল। এসব খালের সীমা নির্ধারণ করে জলপ্রবাহ বাড়াতে কাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২০১৬ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় খালের সংখ্যা ৫৮টি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে এই সংখ্যা অন্তত ৬৯টি। তবে বাস্তবে এখন আর অস্তিত্ব নেই অনেক খালের। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখল ও দূষণসহ নানা অবহেলায় হারিয়ে গেছে এসব খালের অধিকাংশ। এসব খালের সীমানা নির্ধারণে কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি দুই সিটি।
ঢাকার এই খালগুলোর বেশির ভাগের মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রথমে ঢাকা ওয়াসাকে এসব খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে তা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই খাল উদ্ধারে মনোযোগী হয় দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে খালের আগের রূপ ফিরিয়ে আনতে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়। এই কাজে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশের পর থেকে রাজধানীর খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছিল ঢাকা ওয়াসা। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ওয়াসার বাৎসরিক জরিপেই খালগুলোর আকার ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে আসার তথ্য উঠে আসে। ওয়াসার পক্ষ থেকে গণপূর্তকে জানানো হয়, সীমানা নির্ধারণ করে না দেওয়ায় এই খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে ওয়াসা থেকে ২৬টি খাল ও একটি জলাশয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে আরো ১৪টি খাল বুঝে পায় দুই সিটি করপোরেশন। পরে আরো কিছু খালের খোঁজ পায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দুই সিটির মধ্যে ৬৯টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক খাল বিলীন। যেসব খালের অস্তিত্ব এখনো আছে, তার মধ্যে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২৯টি খাল ও একটি জলাশয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় রয়েছে ১১টি খাল। পরে নিজ আওতাধীন এলাকায় আরো ১৪টি খালের সন্ধান পায় এই সংস্থাটি, যা মিলিয়ে ডিএসসিসির খালের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫টিতে।
এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার আরো ১৪টি খাল দক্ষিণ সিটিতে যুক্ত হওয়ার কথা চলছে, যেগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এরই মধ্যে খালগুলোও সিটি করপোরেশনে হস্তান্তরের জন্য কয়েক দফা মিটিংও হয়েছে।
এদিকে ডিএনসিসি খালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর সীমানা নির্ধারণের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়। তবে কোনো রেকর্ড ধরে সীমানা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে প্রথমে জটিলতা তৈরি হয়। পরে কোথাও সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে), কোথাও রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) এবং কোথাও মহানগর জরিপ ধরে খালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছিলেন সিএস দাগ অনুযায়ী সব খালের সীমানা নির্ধারণের। তার নির্দেশের পর সঠিকভাবে খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয় ডিএনসিসি থেকে। এ কমিটির সিদ্ধান্তে সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ২৯টি খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। এসব খালের প্রত্যেকটিতে কম-বেশি সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সিএস দাগ অনুযায়ী ৬৯৬টি, আরএস দাগ অনুযায়ী ১০৫টি, বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) দাগ অনুযায়ী ৫২টি, ওয়াসা নির্ধারিত ১২২টি ও অন্যান্য দাগ অনুযায়ী ৫টি সীমানা পিলার মিলিয়ে মোট ৯৮০টি সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। এখনো পিলার বসানোর কাজ চলমান। এ ছাড়া কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডে ওয়াটার ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএনসিসি।
খালের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, খালের সীমানা নির্ধারণে ৯৮০টি পিলার বসানো হয়েছে সর্বশেষ তথ্য মতে। আমাদের আরো ১ হাজার ৬০০ সীমানা পিলার বসানো হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজটি করছে। যথাসময়েই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সীমানা নির্ধারণ হলে খালের সংস্কার কাজ করা সহজ হবে। তখন খালের পাড় বাঁধাইসহ পাস দিয়ে নান্দনিক সড়ক ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা রাখা হবে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ও প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, খালের বিষয়ে দক্ষিণ সিটির সফলতা হলো আমাদের ১১টি খাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা নিজ উদ্যোগে আরো বেশ কয়েকটি খাল চিহ্নিত করে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান চারটি খাল প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা হবে। অতি দ্রুত এই কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
"