নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্ধারিত সময়ের আগেই অপসারণ
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞকে সেবা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসির) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রথম দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে এবং কোরবানির পশুর ১১টি হাটের মধ্যে ৭টি হাটের বর্জ্য এরই মধ্যে শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে ও বাকি হাটগুলোর বর্জ্যও রাতের মধ্যে অপসারণ করা হয় বলে জানান মেয়র।
গত মঙ্গলবার বিকেলে নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফরমে সংযুক্ত হয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণে সামষ্টিক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘প্রথম দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ আমরা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সম্পন্ন করেছি। সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি এবং যেহেতু আজকেও কোরবানি হয়েছে, সেজন্য এ কাজ চলমান রয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক পশুর বর্জ্য অপসারণে সময়ের মানদ-ে আমরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারণ করেছি। এই যে প্রতিযোগিতা তা একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা। সুতরাং, বর্জ্য অপসারণের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞকে আমরা সেবা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত করতে পেরেছি।’
এ সময় কয়েকটি জায়গায় বর্জ্য পড়ে থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘কোরবানির পশু জবাই বিভিন্ন সময় হয়ে থাকে। একেকজন একেক সময় তা করে থাকে। সুতরাং, আমরা পরিষ্কার করে আসার পরে অনেকেই জবাই করা সেসব পশুর বর্জ্য বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখেন। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকে। এ ছাড়া অনেকেই কোরবানির পশুর বর্জ্যরে সঙ্গে হাটের বর্জ্য মিলিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও অনেকেই কোরবানি দিয়ে থাকে। কিন্তু শতভাগ পরিষ্কার হওয়ার পরেই আমরা তা ঘোষণা দেই এবং প্রথম দিনের বর্জ্য বেশ কয়েকটি জায়গায় পড়ে ও তা অপসারণ করা হয়নি, সে বিষয়টি সঠিক নয়।’ এ সময় হাটের বর্জ্য অপসারণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একসময় হাটের বর্জ্য অপসারণে সপ্তাহ লেগে যেত। আমরা হাটের বর্জ্য অপসারণে আলাদা কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি এবং সে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে এরই মধ্যে ১১টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে ৭টি হাটের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। হাটের বর্জ্য অপসারণে ইজারায় সুনির্দিষ্টভাবে শর্তাবলি উল্লেখ থাকলেও অনেকের মাঝে গাফিলতি থাকে। তারপরও আমরা নির্ধারিত ৭২ ঘণ্টা সময়ের পূর্বেই তা সম্পন্ন করতে পারব। বাকি হাটগুলোর বর্জ্যও রাতের মধ্যে অপসারিত হবে।’
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর নগরী উপহার দেওয়ায় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষত পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ দেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্যানেল মেয়র ও ৪৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শহিদ উল্লাহ মিনু বক্তব্য দেন।
এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিনে দেওয়া কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৯২৭ ট্রিপে মোট ৪ হাজার ৯ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে রাত ৮টায় নির্ধারিত ৬ ঘণ্টায় সবগুলো ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন করে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির সবগুলো ওয়ার্ড থেকে ঈদের দিন রাত ৮টা পর্যন্ত ২ হাজার ১০১ ট্রিপে প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
গত সোমবার সকালে রাজধানীতে ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানির তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বেশির ভাগ জায়গায় বাড়ির সামনে ফাঁকা রাস্তা বা ফুটপাতকেই বেছে নেওয়া হয় কোরবানির জন্য। মাংস কাটাকাটি চলে বাড়ির বেইজমেন্টে। ঢাকায় কোরবানি করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে অন্তত ৩৯ হাজার টন বর্জ্য হবে বলে ধরে নিয়েছে দুই সিটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১১৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৪০টি পিকআপ, ১২৯টি কমপেক্টরসহ ৫২০টি বিশেষায়িত যান মাঠে আছে।
২৮টি ওয়ার্ডে ডিএনসিসির নিজস্ব ২ হাজার ৩৯৪ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৩২৩ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ৪ হাজার ২০০ জন ভ্যান সার্ভিস কর্মী এবং ৪২০ জন মিলিয়ে ৯ হাজার ৩৩৭ জন কর্মী এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। বর্জ্য অপসারণে ৪ হাজার ৯৯৭ জন নিজস্ব ও সাড়ে চার হাজার বেসরকারি কর্মী কাজ করছে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছেন ৬০ জন করে।
বর্জ্য অপসারণে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ১৫০টি মিনি ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর এবং ৪৭টি পে লোডারসহ ৫৬০টি যান নিয়োজিত করেছে দক্ষিণ সিটি। ডিএসসিসি এলাকার ১১টি হাটের প্রতিটিতে ৭০ জন করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে লোডার এবং ১১টি টায়ার লোডার কাজ করে।
"