বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট
জমে উঠেছে বগুড়া জেলার পশুর হাটগুলো। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা। হাটের পাশাপাশি খামার থেকেও গরু-ছাগল বিক্রি হচ্ছে। ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি এ জেলায়। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও এবার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতারা পছন্দের পশু ক্রয় করতে বিভিন্ন হাট ঘুরছেন। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। এদিকে খামারিদের উৎপাদন মূল্য সহনীয় রাখতে গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
গত কয়েকদিন জেলার মহাস্থান, চাঁদমুহা, ধাপেরহাট, কালিতলা, ঘোড়াধাপ হাটে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হাট। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। তবে চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুপালন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে করে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। বগুড়া হাটগুলোয় ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদাই বেশি। বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম, জহির উদিন, আবদুর রহমান জানান, এবার পশু পালনে খরচ বেড়েছে, তবে হাটে কাঙ্ক্ষিত দাম নেই। শিবগঞ্জের খামারি মোহন মিয়া তার অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুর দাম ২ লাখ ২০ হাজার হাকালেও ক্রেতা ১ লাখ ৫০ হাজার বলে আর দাম বাড়াননি। তবে পরে তিনি সেই গরু ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। হাটে আসা ক্রেতা সাজেদুর রহমান শিপলু সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিশাল আকৃতির শাহীওয়াল জাতের গরু ক্রয় করে জানান, গত বছরের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি। এ ছাড়া হাটে গরু ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছে থেকে ইজারদাররা হাসিল আদায় করছেন, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তানসেন উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা জানান, তারা বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখেছেন গরু পছন্দ হলেও দামে মিলছে না। মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।
জানা গেছে, কোরবানিকে ঘিরেই প্রতি বছরের মতো এবারও বগুড়ার খামারিরা বিদেশি জাতসহ দেশি জাতের গরু লালন পালন করেছেন। প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই আমেরিকার ব্রাহমা ক্রস, ভারতীয় শাহীওয়াল, নেপালের গীরসহ দেশীয় জাতের গরু ছাগল পালন করে এখন ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন প্রান্তিক খামারিরা। গ্রামের পাশাপাশি শহরের বসতবাড়িতেও ১ থেকে ১০টি পর্যন্ত গরু পালন হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির জন্য জেলায় ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারি ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১টি পশু প্রস্তুত করেছেন। গত বছর ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৫টি। প্রস্তুত করা পশুর সঙ্গে এবার বেড়েছে কোরবানির পশুর চাহিদা। জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি। যা গত বছরের তুলনায় ৮ হাজার বেশি। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ২ লাখ ৭০ হাজার ৪১টি, ছাগল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৫৭টি, ভেড়া ও গারল ৩৯ হাজার ৮৫১টি এবং মহিষ ২ হাজার ২৬৬টি। এসব পশু এবার বগুড়া জেলায় চাহিদা পূরণ করেও ২৯ হাজার ১৫৫টি উদ্বৃত্ত থাকবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, জেলায় প্রায় অর্ধলক্ষ খামারির মধ্যে ৯৫ ভাগ প্রান্তিক। গ্রামে ও শহরের খামারিদের পাশাপাশি বড় খামারগুলোয় কোরবানির পশু লালন-পালন হচ্ছে। খামারিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করায় খামারি ও পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া খামারে উৎপাদন মূল্য সহনীয় রাখতে ঘাস চাষ ও গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
এদিকে হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত হাসিলের অতিরিক্ত কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না। প্রতিটি হাটেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত মনিটরিং করছেন বলে তিনি জানান।
"