আরিফ মাহমুদ, কলারোয়া (সাতক্ষীরা)
কলারোয়ায় খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুত
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা। অন্যদিকে মা-চাচিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন পিঠাপুলি, ক্ষীর, পায়েস তৈরির চালের গুঁড়া তৈরিতে। তবে শীতের মৌসুমে আগের মতো পিঠাপুলির ধুম আর তেমন নেই গ্রামে
শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে খেজুরের রস আর ক্ষীর, পায়েস, নানা রকম ও নামের পিঠাপুলি। শীতের সকালের জিরান রসের স্বাদ নেওয়ার মজাই আলাদা। তবে আগের মতো এখন আর চোখে পড়ে না খেজুর গাছের বাগান। শীতের সকালে দলবেঁধে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং বাড়িতে এনে সবাই মিলে সকালের টাটকা জিরান রস খাওয়ার মজা বোধহয় ভুলে যাওয়ার মতো নয়।
এরই মধ্যে শীতের আবহাওয়া শুরু হয়েছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গ্রামের প্রত্যেকটি মাঠে ও বসতবাড়ির আঙিনায় গাছিরা দা-খুমি নিয়ে ছুটছেন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। গাছগুলো প্রস্তুত করছেন রস গ্রহণের জন্য।
খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করা কয়েকজন গাছি জানান, ‘রস গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে প্রথমে গাছের উপরিভাগের এক সাইটের পাতা তথা বেল্লি কাটা হয়। এরপর কয়েকটি ধাপে খেজুর গাছের উপরিভাগের এক পাশে চাঁচ দিতে হয়। কয়েকদিন পরপর সামান্য পরিমাণে চাঁচ ও চোখ আকৃতির কাটার পর রস আসা শুরু করে। তখন সেখানে সরু আকৃতির বাঁশের কুঞ্চির খিলিন দেওয়া হয়। সেই খিলিন দিয়ে রস টপ টপ করে পড়ে থাকে। খিলিনের নিচে ভাঁড়, কলস বা বোতল দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। এভাবে কয়েকদিন পরপর গাছের কাটার স্থানে চাঁচ দিলে জিরিন বা টাকটা রস আসে প্রতিনিয়ত। চাঁচ দেওয়ার পর প্রথম আসা রসকে জিরিন রস বলা হয়ে থাকে। এরপর যে রস আসে সেগুলো উলা রস বা অন্যান্য নামও বলা হয়ে থাকে।’
গাছিরা আরো জানান, ‘গাছপ্রতি গাছিরা নিচ্ছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। গত বছর এক ভাঁড় রস বিক্রি করা হয়েছিল ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।’
রবিউল ইসলাম নামের এক গাছি জানান, ‘রস জ্বাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়ে থাকে। গোটা শীত মৌসুমে খেজুরের রস যেমন সবার কাছে আকর্ষণীয় তেমনি বছরজুড়ে খেজুরের গুড় ও পাটালিও থাকে মুখোরোচক খাদ্য হিসেবে।’
সবমিলিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিদর্শন হিসেবে খেজুরের রস সংগ্রহে কর্মযজ্ঞতা শুরু হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে। সেই সঙ্গে শীতের নানা নামের ও রকমের পিঠা মৌসুমের সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে দেখা যাচ্ছে এখানে-সেখানে।
"