চট্টগ্রাম ব্যুরো
বিএসসির ৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শিপিং করপোরেশনের বহরে ২১টি সমুদ্রগামী জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিএসসির ৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক নৌপথে নিরাপদ ও দক্ষ শিপিং সেবা প্রদান করা এবং বাংলাদেশের সিংহভাগ আমদানী ও রপ্তানি পণ্য নিজস্ব জাহাজ বহর দ্বারা পরিবহন করার উদ্দেশ্যে বিএসসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী নৌ-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবহন নেটওয়ার্কের ভিত গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি তার অধীনে রেখেছিলেন। করপোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভের মাত্র চার মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ ‘বাংলার দূত’ এবং এরপর পরই ‘বাংলার সম্পদ’ নামক অপর একটি জাহাজ করপোরেশনের বহরে সংযোজিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনায় তার জীবদ্দশায় ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ বিএসসির জাহাজ বহরে সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে এবং তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক সামগ্রিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিএসসির উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে বিএসসির বহরে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আরো চারটি নতুন জাহাজ সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিএসসি বর্তমানে আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিজস্ব অর্থে জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বিএসসি চেয়ারম্যান ও নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে। কয়লা, এলএনজি এবং বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ও আর্থিকভাবে লাভজনক বিবেচনায় বিভিন্ন সাইজ ও ধরনের জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এরই মধ্যে উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে দি বাংলাদেশ ফ্লাগ ভেসেলস (প্রটেকশন অব ইন্টারেস্ট) অ্যাক্ট ২০১৯ পাস হয়েছে। ফলে সরকারি তহবিলে আমদানি বা রপ্তানিকৃত পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে বিএসসি অগ্রাধিকার পাবে।
স্বাধীনতার পর বাঙালির আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর বর্বর হত্যাকাণ্ডের কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করা হয়েছে, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন, রেললাইন সংযোগ হয়েছে, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, ঢাকা বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, পদ্মা সেতু, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পায়রা ও মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া খুলনার কেডিএ অ্যাভিনিউ এলাকায় ১১ দশমিক ৭৩ কাঠা জমির সমস্যা সমাধান করে সেখানে বিএসসির শপিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়েছে।
সেখানে দোকান ভাড়া দিয়ে বর্তমানে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় হচ্ছে। খুলনার বয়রা আবাসিক এলাকায় ৪০ কাঠা জমিতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়া হয়েছে। জায়গাটির বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
"