প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

‘সূর্য যেহেতু জ্বালানি দেয় তাই তেল প্রয়োজন নেই’

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় গ্যাস ও এলএনজি ব্যবহার বাড়ানো কোনো সমাধান নয়, বরং সবুজায়ন-নবায়নযোগ্য জ্বালানিই ভবিষ্যৎ। তাই গ্যাস ও এলএনজিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। সূর্য যেহেতু জ্বালানি দেয়; তাই তেল আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুসারে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়ন দরকার। আমরা জলবায়ু উষ্ণতা থেকে বাঁচতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর কাছে ঋণ নয়, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন অ্যান্ড ফুসিল ফুয়েলস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব দাবিতে খুলনায়, মোংলায় ও পাইকগাছায় সাইকেল র‌্যালি, সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খুলনার নগরীর রয়েল মোড়ে সাইকেল র‌্যালি ও সমাবেশ হয়। ওয়াটারকিপারস-বাংলাদেশ, ব্রতী, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, কোস্টাল ভয়েস অব বাংলাদেশ (কব) ও খুলনা সাইক্লিস্ট যৌথভাবে এ কর্মসূচি আহ্বান করে।

কব সভাপতি মোস্তফা জামাল পপলুর সভাপতিত্বে র‌্যালির উদ্বোধন করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া সম্পাদক শাকিলা পারভীন, কব সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে, সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মতি, ইয়াসিন আরাফাত রুমি, মোরশেদ নেওয়াজ, খুলনা সাইকেলিংয়ের মো. সেতু আলম, রেজাউর রহমান ছাত্রনেতা সৌমিত্র সৌরভ, রিয়াদ হোসেন হোসেন প্রমুখ।

মোংলা (বাগেরহাট) : শুক্রবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখের সভাপতিত্বে জ্বালানি অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে মোংলার চিলা বাজার এলাকার সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীতে জলবায়ু অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ও ব্রতীর আয়োজনে এ জলবায়ু অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

জলবায়ু অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের কমলা সরকার, বাপা নেতা গীতিকার মোল্লা আল মামুন, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার শেখ রাসেল, মেহেদী হাসান বাবু, তন্বী মন্ডল প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু সংকটের জন্য আমরা দায়ী নই। অতিরিক্ত মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন আজ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি নীতি পরিহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি গ্রহণ করতে হবে। দেশের সব জনগণের জন্য সুলভ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৭ ও ১৩ অর্জনের পূর্বশর্ত।

পাইকগাছা (খুলনা) : শুক্রবার ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন অ্যান্ড ফুসিল ফুয়েলস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফুটবল খেলা ও সাইকেল শোভাযাত্রা শেষে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি স্মৃতিসৌধ চত্বরে মানববন্ধন-সমাবেশ হয়। ওয়াটারকিপারস-বাংলাদেশ, ব্রতী, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং সচেতন সংস্থা এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সাবেক কৃতী ফুটবলার শেখ আবদুর রশিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, পাইকগাছা প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি মো. আবদুল আজিজ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা দুলাল দেবনাথ, অধ্যক্ষ শিমুল বিল্লাহ বাপ্পি, অনির্বাণ লাইব্রেরির সহসভাপতি মানিক ভদ্র ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ, যুবলীগ নেতা প্রদীপ দত্ত, সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস, পরিবেশ কর্মী অমর ঘোষ ও নদী কর্মী আলাউদ্দিন মোড়লসহ অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের কপ-২৭ সম্মেলনে ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ক্রমে কয়লা নির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসবে। এর আগে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাইলেও অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় বহু দেশের বিরোধিতায় সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর বিরোধিতার ফলে ওইসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের বিবেকমান মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ দুর্যোগের ঝুঁকিতে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নেই। বরং জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জনগণ সব সময় বৈষম্যের শিকার। বরাদ্দের অভাবে সেখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো আটকে আছে। এই অবস্থায় ওই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা ও দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close