সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

বেরোবিতে সম্প্রীতি ও উৎসবের ইফতার

প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ও খেলার মাঠে চলতে থাকে ইফতারের নানা আয়োজন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বসে পড়েন তারা। দেখা যায়, কেউ ফল কাটাকাটি করছেন, কেউ শরবত বানানোর কাজে ব্যস্ত, আবার কেউবা ছোলা-মুড়ি মাখানোর কাজ করছেন।

রংপুরের মডার্ন মোড় থেকে হাফ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই দেখা মিলবে ৭৫ একরের সবুজ শ্যামলে ঘেরা ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)। রমজানের বিকালে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লেই শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও মাঝে মধ্যে দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসে বসে পড়েন ইফতারের স্বাদ নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, স্বাধীনতা চত্বর মাঠ, ক্যাফেটেরিয়ার সামনের মাঠ, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির আশপাশ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ইফতারির এ আয়োজন। ইফতারিতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও। বাদ যায় না নারী শিক্ষার্থীরাও।

একসাথে ইফতারের অনুভূতি জানতে চাইলে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন রায় বলেন, ‘রমজানে সারাদিন ক্যাম্পাস নীরব মনে হলেও ইফতারের আগে শুরু হয় ব্যস্ততা। সবাই একসাথে ইফতার খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বসে পড়ে গোল হয়ে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় পুরো ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরাই বসে পড়েন একসাথে। আমি হিন্দু হলেও আমার ফ্রেন্ড সার্কেল সেই মুহূর্তগুলো থেকে আমাকে এড়িয়ে চলেনি।’

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, ‘আমি এবং আমার সহপাঠীরা অবস্থান করছি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। একা একা ইফতার করা কষ্টের। এ কষ্টের বোঝা কমিয়ে দিয়েছে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বন্ধুরা। আমরা দল বেঁধে একসাথে ইফতার করি। এক পরিবার ছেড়ে এসে আমরা খুঁজে পেয়েছি নতুন আরেক পরিবার।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মনোয়ার বলেন, ‘ভার্সিটির নবীন সদস্য হয়েও দলবেঁধে সেন্ট্রাল মাঠে যখন ইফতার করি এবং আশপাশে বড় ভাইয়া আপুদের ইফতারের সময়ে রমরমা আমেজ দেখতে পাই। তখন পরিবার ছেড়ে এসে একা ইফতার করার সব কষ্ট মুহূর্তেই ভুলে যাই।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েসা সিদ্দিকা আঁখি বলেন, ‘শ্রেণি ধর্ম বর্ণ জাত বিভেদ ভুলে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে আমরা ইফতার করি প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে। জমকালো ইফতারের মাধ্যমেই বন্ধুত্বের বন্ধন হোক অটুট সেই প্রত্যাশা।’

গণিত বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ‘সারাদিন রোজা রেখে বিকেলে বাবা ফোন দিয়ে যখন বললেন, প্রতিবার ইফতারের আয়োজন তো তুমিই কর, এবার তুমি নেই তোমাকে খুব মনে পড়ছে। আমিও আবেগে কেঁদে ফেললাম। বিকেলে এক বন্ধু ফোন করে বলল- ক্যাম্পাসে চলে আয়, সবাই ইফতার করব। তখন সব দুঃখ ভুলে যাই।’

‘ইইই’ বিভাগের রানা ইসলাম বলেন, ‘ইফতার পরিবেশন ও শরবত বানানোর সময় মনে হচ্ছিল যেন নিজের পরিবারের সাথেই আছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close