শংকর চৌধুরী, খাগড়াছড়ি থেকে

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত গড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মং প্রু সেইন

‘আমার আলোয় বিকশিত হোক আমার পৃথিবী’ এবং ‘গোষ্ঠী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ গড়ি, সম্প্রীতির খাগড়াছড়ি’ স্লোগানে খাগড়াছড়িতে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মং সার্কেল চিফ মং প্রু সেইন, শিক্ষাবৃত্তি ও সার্টিফিকেট প্রদান ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের আয়োজনে, খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ মাহি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার মাহি বলেন, তৎকালীন মং সার্কেল চিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মং প্রু সেইন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে অনেকটা স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সংক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অসামান্য অবদান রেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা তুলে দিয়েছিলেন। এছাড়াও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের রাজভান্ড খুলে দেওয়ার মাধ্যমে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে মাতৃভূমির জন্য যে নিদর্শন স্থাপন করেছেন, তা বর্তমান যুগের শিক্ষার্থী ও বিদ্যানুরাগীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শুধু শিক্ষনীয় নয়, আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। মুক্তিযুদ্ধে এরকম অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান রয়েছে সেগুলো সবাইকে সব সময় স্মরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে মং প্রু সাইনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা। শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজে আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।

দেশ স্বাধীনে তার অসামান্য অবদান এবং মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কর্তৃক মং সার্কেল চিফ মং প্রু সেইন বাহাদুর শিক্ষাবৃত্তির প্রবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই শিক্ষাবৃত্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে খাগড়াছড়ির পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিটি মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। এছাড়া গরিব এবং অসহায় শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষার সমান সুযোগ পায় তা নিশ্চিতকরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথাকে সমুন্নত রাখার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার প্রক্রিয়াও পূর্বের মতো অব্যাহত থাকবে বলেও জানান, ব্রিগেডিয়ার ড. গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ মাহি।

অনুষ্ঠানে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর মো. জাহিদ হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক পিপিএম, মং সার্কেলের সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

এ সময় ডিজিএফআইয়ের ডেট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী, খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রুবায়েত আলম পিএসসি, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. ফিরোজ রব্বানী, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা ও সহযোগী অধ্যাপক (অব.) মধু মঙ্গল চাকমা, বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা এবং অত্র ব্রিগেডের সব জোন কমান্ডার, অধিনায়ক, সাংবাদিক, বিভিন্ন জোন থেকে আগত হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কলেজে অধ্যায়নরত এসএসসি ও এইচএসসির ১০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে ৫ লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন খাগড়াছড়ির মং সার্কেল চিফ মং প্রু সাইনের দৃষ্টান্ত অবদান থাকা সত্যেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও, স্থানীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথাকে সমুন্নত রাখার জন্য এবং বীর এ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করার জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও সার্টিফিকেট প্রদান শুরু করে। সে থেকে প্রতি বছর খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন এ বৃত্তি দিয়ে আসছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close