চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

চট্টগ্রামের কৃতী সন্তানদের নামে স্থাপনা গড়ব : চসিক মেয়র

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রামের কৃতী সন্তানদের চিরস্মরণীয় করে রাখতে স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলমের নামে চসিক পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ ও ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মেয়র এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বীর সন্তানরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। তাদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘কবি মাহবুব উল আলম চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে সুসংগঠিত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তরুণ ছাত্রনেতারা যখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লড়ছেন, রক্ত ঝরাচ্ছেন তখন কবি মাহবুব উল আলম ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা রচনা করেন।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম : বীর চট্টগ্রাম!’ আজ বীর চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান কবি মাহবুব উল আলমের নামে এ লাইব্রেরির নামকরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা কবি মাহবুব উল আলমের প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করুন। আপনাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। যে বাংলা হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সাম্যের ঠিকানা।

সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আধুনিক চট্টগ্রাম গড়তে চসিক কাজ করছে। বই যুক্তি শেখায়, মুক্তি দেয়। এই লাইব্রেরি পাঠকদের মধ্যে আলো ছড়াবে, তাদের স্বাধীনতার চেতনা শেখাবে এই আমার কামনা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ জুবায়ের, আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, কবি মাহবুব উল আলমের জামাতা স্থপতি ইশতিয়াক আহমদ আলম চৌধুরী, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, আঞ্চলিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম, উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।

ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। লালদীঘি ময়দানে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। এর কয়েক দিন পরই সে সময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী আমৃত্যু নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close