নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অকালমৃত্যুর কারণ অনিরাপদ জ্বালানি

গবেষণা প্রতিবেদন

রান্নায় অনিরাপদ জ্বালানির ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই এবং জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, অন্তঃসত্ত্বা বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা, অকাল জন্ম ও কম ওজনের জন্ম ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গর্ভাবস্থার জটিলতা কারণে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বাড়ছে। এক গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

‘রান্নার জ্বালানি থেকে গৃহস্থালির বায়ুদূষণ এবং বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মৃত্যুর সঙ্গে এর যোগসূত্র’ নিয়ে গবেষণা করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের একটি টিম। এর মধ্যে আছেন পাঁচজন শিক্ষার্থী এবং তিনজন শিক্ষক।

পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- মো. বাদশা আলম, সুপ্রিয়া আচার্য্য, এস এম আশিক মাহমুদ, জেসমিন আক্তার তানিয়া ও মো. মোস্তারিদ আলী খান। দুজন শিক্ষক হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম ও ড. মো. নুরুজ্জামান খান।

গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের বেশির ভাগ নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবার রান্নার কাজে পিট, কাঠ ও কয়লা ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ রান্নার জন্য অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে। এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন অকালমৃত্যু ঘটে, তার প্রায় সবই নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটে। সঙ্গে শিশু মৃত্যুর হারও বেড়েই চলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মায়েরা অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে থাকে। গ্রামীণ এলাকায় এই হার আরো বেশি (৯২ শতাংশ)। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ কাঠ এবং ২৭ শতাংশ কৃষি জ্বালানি ব্যবহার করে। এটি অল্পবয়সি শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যা বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ। অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করার জন্য ৭৯ শতাংশ মায়েরা মাঝারিভাবে এবং ১ দশমিক ২১ শতাংশ মায়েরা উচ্চভাবে হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এই গবেষণায় পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক মাসের কম বয়সি শিশু যাদের মৃত্যুহার ২৫ শতাংশ, এক বছরের নিচের বয়সি শিশু যাদের মৃত্যুহার ৩৫ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের নিচের বয়সি শিশুদের মৃত্যুহার ৩৮ শতাংশ।

এছাড়াও এই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মায়েরা নিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের তুলনায় যারা অনিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের শিশুদের (০-১ মাস বয়সি) মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ৩ দশমিক ৪৪ গুণ বেশি এবং ১২ মাস বা ১ বছরের নিচে বয়িস শিশুদের মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ২ দশমিক ৩৯ গুণ বেশি।

এই গবেষণার আরো একটি ফলাফল হচ্ছে, যেসব মায়েরা হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় তাদের তুলনায় যারা উচ্চভাবে সম্পৃক্ত তাদের শিশুদের (০-১ মাস বয়সি) মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ৪ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি এবং ১২ মাস বা ১ বছরের নিচে বয়সি শিশুদের মৃত্যুহারের সম্ভাবনা ২ দশমিক শূন্য ৫ গুণ বেশি। সাধারণত রান্নার কাজে জড়িত এবং রান্নার সময় প্রায়ই মায়েদের সঙ্গে তাদের ছোট বাচ্চারা থাকে।

এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষিত, মাঝারিভাবে গণমাধ্যমের সংস্পর্শে আসা ও দরিদ্র মায়েদের বাচ্চাদের মধ্যে নবজাতক, এক বছরের নিচের শিশু এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি মৃত্যুর হার বেশি দেখা গেছে এবং এই মৃত্যুহার মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের মধ্যে বেশি।

গবেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে নবজাতক যাদের বয়স এক মাসের নিচে এবং পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যবহৃত অনিরাপদ জ্বালানি। নিরাপদ জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানোর জন্য প্রশাসনিক কৌশলগত উদ্যোগগুলোকে জাতীয় স্তরের নীতি এবং নির্ধারণে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। মানবস্বাস্থ্যের ওপর ব্যবহৃত অনিরাপদ জ্বালানির বিরূপ প্রভাব, বিশেষ করে শিশু স্বাস্থ্য, মায়েদের তাদের পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের রান্নার জায়গায় না আনতে অনুপ্রাণিত করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close