ক্রীড়া ডেস্ক
টিকে রইল ম্যান সিটির স্বপ্ন

একযোগে অনুষ্ঠিত হলো ১৮টি ম্যাচ। ভাগ্য নির্ধারণের অপেক্ষায় থাকা ক্লাবগুলো লড়াই করল সবকিছু উজাড় করে দিয়ে। কেউ সফল হয়ে টিকে রইল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, কাউকে ধরতে হলো বাড়ির পথ। প্রতিযোগিতার লিগ পর্বের মতো নকআউট পর্ব দিচ্ছে রোমাঞ্চের হাতছানি। এই যেমন প্লে-অফে ম্যানচেস্টার সিটির সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ অথবা বায়ার্ন মিউনিখ প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে রাফায়েল ওনিয়েডিকার শট যখন ম্যানচেস্টার সিটির জালে জড়াল, তখন পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের বিদায়ের শঙ্কা জেগেছিল। তবে গা ঝাড়া দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। প্রত্যাবর্তনের দারুণ এক গল্প লিখে ২৪ মিনিটের মধ্যে তিনবার গোল উদযাপন করল সিটিজেনরা। ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে জিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টিকে রইল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাধারীরা।
গত বুধবার রাতে আসরের শেষ লিগ পর্বের শেষ রাউন্ডের বাঁচামরার ম্যাচে ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে বেলজিয়ান প্রতিপক্ষকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ম্যান সিটি। এতে পয়েন্ট তালিকার ২২তম স্থানে থেকে প্লে-অফে খেলা নিশ্চিত করেছে তারা। আট ম্যাচে তিনটি জয় ও দুটি হারে তাদের অর্জন ১১ পয়েন্ট। মাতেও কোভাচিচের গোলে সমতায় ফেরা স্বাগতিকরা লিড নেয় জোয়েল ওরদোনেজের আত্মঘাতী গোলে। এরপর সাভিনিয়ো লক্ষ্যভেদ করে তারকায় ঠাসা দলটির নকআউটের আগেই ছিটকে যাওয়ার সংশয় দূর করে দেন।
হারলেও কপাল পোড়েনি ব্রুগের। শেষ দল হিসেবে তারাও প্লে-অফের টিকিট পেয়েছে। সিটির মতো আট ম্যাচে ১১ পয়েন্ট হলেও গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থাকায় তাদের অবস্থান পয়েন্ট তালিকার ২৪ নম্বরে। ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিটে কোনো শটই থাকেনি লক্ষ্যে। এই সময়ে দুই দলই বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোলরক্ষকদের কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। প্লে-অফে পৌঁছাতে সিটির সামনে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল না। তারা বরাবরের মতো গুছিয়ে আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করতে থাকে। তবে পাল্টা আক্রমণনির্ভর কৌশল বেছে নেওয়া ব্রুগেই ছিল উজ্জ্বল। বলের দখল যখনই তারা পায়, তখনই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে উঠে ভীতি জাগায় তারা। এর মাঝে ১৭তম মিনিটে বল জালে পাঠান ম্যান সিটির জার্মান মিডফিল্ডার ইল্কাই গুন্দোয়ান। তবে তিনি অফসাইডে থাকায় ম্যাচের স্কোরলাইনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সেই হতাশা আরো জেঁকে বসে ৪৫তম মিনিটে। মিডফিল্ডার ওনিয়েডিকার গোলে পিছিয়ে পড়ে রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ২০২২-২৩ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নরা। পাহাড়সম চাপ কাঁধে নিয়ে স্প্যানিশ কোচ গার্দিওলা বিরতির পর পরিবর্তন আনেন শুরুর একাদশে। গুন্দোয়ানের জায়গায় মাঠে প্রবেশ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সাভিনিয়ো। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু পজিশনেও আসে বদল। লেফট উইং থেকে ফিল ফোডেন চলে যান রাইট উইংয়ে, রাইট উইং থেকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে বার্নার্দো সিলভা আর সাভিনিয়ো খেলেন লেফট উইংয়ে। কেভিন ডি ব্রুইনা আগের মতোই স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে থাকেন। এতে ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব কাটিয়ে সিটির আক্রমণের ধার বাড়ে।
ফল আসতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। ৫৩তম মিনিটে মাঝমাঠে জন স্টোনসের কাছ থেকে বল পেয়ে একাই সামনে এগিয়ে যান ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার কোভাচিচ। তিনি ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে মাপা শটে গোল করলে সমতা টানার স্বস্তি মেলে স্বাগতিকদের। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা হাওয়া হয়ে যেতে পারত। ৫৫ ও ৫৬তম মিনিটে পরপর দুটি দারুণ আক্রমণ শানায় ব্রুগে। দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সিটির রক্ষাকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদারসন। ৬০তম মিনিটে অরো এক দফা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে গার্দিওলার দল। ক্রিসতস জলিসের শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। বল ঠেকানোর মতো পজিশনে তখন ছিলেন না এদারসন। এর দুই মিনিট পর উল্লাসের ঢেউ ওঠে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে। বাম প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইয়োসকো ভারদিওলের ক্রস ঠেকাতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন ডিফেন্ডার ওরদোনেজ। তার পায়ে লেগে বল অতিক্রম করে গোললাইন।
এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যান সিটির আক্রমণ আরো ধারালো হয়ে ওঠে। ৭৩তম মিনিটে ব্যবধান প্রায় বাড়িয়েই ফেলেছিল তারা। কিন্তু তাদের পরপর দুটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় ব্রুগে। নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ডের শট গোলরক্ষক সিমন মিনিওলে আটকে দেওয়ার পর সাভিনিয়োর শট গোললাইন থেকে ফেরান ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডন মেকেলে।
"