ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

প্লে-অফের আরো কাছে খুলনা

গ্লোবাল সুপার লিগ থেকে শিরোপা জিতে ফেরা রংপুর রাইডার্সের বিপিএলের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। নিজেদের প্রথম আট ম্যাচের সবকটিতে জিতে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা। এমন অবস্থায় সবার জানতে চাওয়া এই রংপুরকে থামাবে কে? অথচ সেই রংপুরই যেন জিততেই ভুলে গেছে। চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে হারতে হয়েছিল তাদের। ঢাকায় ফিরে সেই রাজশাহীর বিপক্ষে আরো একবার হার। আগের ম্যাচে নুরুল হাসান সোহানরা জিততে পারেনি চিটাগং কিংসের বিপক্ষেও। নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষেও হার দেখেছে রংপুর। টানা চার ম্যাচ হেরে এলিমিনেটর খেলার শঙ্কায় তারা। অথচ প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল তাদের। চিটাগং শেষ দুই ম্যাচে জিতলে দুই থেকে পয়েন্ট টেবিলের তিনে নেমে যাবেন সোহানরা। রংপুরকে ৪৬ রানে হারিয়ে নিজেদের সেরা চারে যাওয়ার পথটা সুগম করেছে খুলনা। ১০ পয়েন্ট নিয়ে চারে থাকা খুলনা শেষ ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসকে হারাতে পারলেই প্লে-অফ নিশ্চিত হবে মেহেদী হাসান মিরাজদের। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় ১২ পয়েন্ট নিয়েও বাদ পড়বে রাজশাহী। খুলনার জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন নাইম শেখ। উদ্বোধনী জুটিতে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ভালো শুরু করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। খুলনার অধিনায়ক ফেরার পর অ্যালেক্স রসও সুবিধা করতে পারেননি। যদিও নাইমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারকে। তবে নাইম পরবর্তীতে যা করেছেন তা দেখে হয়তো রস নিশ্চিত খুশিই হয়েছেন। শুরুতে দেখেশুনে ব্যাটিং করলেও সময় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত রান তুলেছেন নাঈম। রংপুরের অগোছালো বোলিংয়ের বিপক্ষে চার-ছক্কায় ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাঁহাতি ওপেনার সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৫৫ বলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওপর ঝড় তুলে। নাঈম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১১১ রানে। ক্যামিও ইনিংসে ২২০ রানের পুঁজি পেতে অবদান রাখেন ১৪ বলে ২৯ রান করা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।

২২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। পাওয়ার প্লে শেষের আগেই সাজঘরে ফেরেন তৌফিক খান তুষার ও সাইফ হাসান। তাদের দুজনের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৫ রান তোলে রংপুর। সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন ইফতিখার আহমেদ ও সৌম্য সরকার। যদিও তাদের দুজনের জুটি বড় হতে দেননি ?মুশফিক হাসান। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা ইফতিখার। পরবর্তীতে শেখ মেহেদীও দ্রুত রান তুলেছেন। ১৪ বলে রান করে ফিরেছেন মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টায়। একই ওভারে আউট হন অধিনায়ক সোহানও। একটু পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। বাঁহাতি ওপেনার শেষ ওভারে ফিরেছেন ৭৪ রানের ইনিংস খেলে। বাকিরা কেউ সঙ্গ দিতে না পারায় সৌম্য ওমন ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। খুলনার হয়ে বল হাতে আলো ছড়িয়ে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন চোট কাটিয়ে বিপিএল দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ফেরা মুশফিক হাসান। এ ছাড়া নাওয়াজ দুটি উইকেট নিয়েছেন।

এদিকে তানজিদ হাসানের ৪২৭ রান পেরিয়ে এবারের বিপিএলের রানের তালিকায় এখন শীর্ষে নাঈম। এই ইনিংস শেষে ১১ ইনিংসে তার রান ৪৪৪। স্ট্রাইক রেট প্রায় দেড়শ। বারের বিপিএলে এই নিয়ে সেঞ্চুরি হলো আটটি। দেশি-বিদেশি ব্যাটসম্যানদের শতরান সমান চারটি করে। বিপিএলে প্রথম হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে বেক্সিমকো ঢাকার হয়ে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৪ বলে ১০৫ রান। সেঞ্চুরির পর শেষ ওভারেও একটি ছক্কা মেরে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন নাঈম। তিনি যখন সেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন, তার চেয়ে বেশি খ্যাপাটে উদযাপন করলেন ডাগআউটে খুলনা অধিনায়ক মিরাজ দলের জন্য ইনিংসটি যে ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইগার্স : ২২০/৪ (২০ ওভার) (মিরাজ ২১, নাঈম ১১১*, রস ১২, বসিস্তো ৩৬, অঙ্কন ২৯; আকিফ ১/৩১)

রংপুর রাইডার্স : ১৭৪/৯ (২০ ওভার) (সৌম্য ৭৪, ইফতিখার ১৯, মেহেদী ২৭, সাইফউদ্দিন ১৮; মুশফিক ৩/২৪)

ফল : খুলনা টাইগার্স ৪৬ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : নাঈম শেখ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close