ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘দল হিসেবে খেললে অধিনায়কত্ব করা সহজ’

অধিনায়কের কাজকে সহজ করার জন্য দল হিসেবে খেলার ওপর জোর দিয়েছেন চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সকে নেতৃত্ব দেওয়া নুরুল হাসান সোহান। মাঠে দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দেওয়ায় এরই মধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
গণমাধ্যম সঙ্গে আলাপকালে সোহান বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান, এমন একটি দলকে আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি যারা দারুণ একটি দল হিসেবে গড়ে উঠেছে। দলে কতজন শীর্ষ খেলোয়াড় বা তারকা খেলোয়াড় আছে, সেটি বড় নয়। দল হিসেবে খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে দল হিসেবে খেলাকে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। উত্থান-পতন থাকবেই, ১১ জন খেলোয়াড়ই যে একসঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলবে, তেমনটা নয়। আমরা যদি দল হিসেবে থাকতে পারি, তাহলে অনেক দিক থেকেই উপকৃত হব।’
সোহানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন রংপুরের প্রধান কোচ মিকি আর্থার এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল। মাঠে ও মাঠের বাইরের খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করায় সোহানকে বৈচিত্র্যময় দলনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দুজনে। গত ডিসেম্বরে সোহানের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর রাইডার্স। ঐ আসরে বিভিন্ন দেশের পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশ নিয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দল ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতে রংপুর। দক্ষতার সঙ্গে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এবারের বিপিএলের শিরোপা জয়ে রংপুরকে ফেভারিট করে তুলেছেন সোহান। এখন পর্যন্ত আট ম্যাচের সবক’টিতেই জিতেছে তার দল।
রংপুরের খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট ও মালিক পক্ষের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন বলে জানান সোহান, ‘আমাদের জন্য টুর্নামেন্ট ভালো যাচ্ছে। এ মুহূর্তে আমরা টুর্নামেন্টের মাঝপথে আছি। গুরুত্বপূর্ণ হলো, ফোকাস ধরে রাখা।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন ১৪ বা ১৫ জন খেলোয়াড় তার দল নিয়ে চিন্তা করে এবং একই লক্ষ্যে কাজ করে, তখন অধিনায়কত্ব সহজ হয়ে যায়। সবাই যখন দলের কথা চিন্তা করে এবং দায়িত্ব নেয় তখন অধিনায়কের আসলে কিছুই করার থাকে না।’ সোহান বলেন, ‘এ কারণে আমি যেকোনো দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর এমন খেলোয়াড়দের দলে নেওয়া নিশ্চিত করি, যারা শুধু দলের কথাই চিন্তা করবে। আমি আগেও বলেছি, বড় নামের চেয়ে আমি এমন খেলোয়াড়কে পছন্দ করি যে শুধু দলের হয়ে খেলে থাকে। কারণ সবাই যখন দলের কথা চিন্তা করে, আসলে তখন সে অন্যের দায়িত্ব নিতে পারে।
সবাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় আপনাকে সবসময় বড় ইনিংস খেলতে হবে। কখনো কখনো মাত্র ২০ রানও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কখনো কখনো একটি ক্যাচ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কখনো কখনো একটি রান বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এটাকে আমরা দলের জন্য অবদান বলে থাকি। যখন সবাই এমনটাই ভাবে, তখন অধিনায়কত্ব সহজ হয়ে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে, আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি খুবই চমৎকার। তারা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে এবং সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করেছে। প্রধান কোচ মিকি আর্থার এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলও অনেক সাহায্য করেছে। রংপুর দলে আমরা একটি সুখী পরিবার পেয়েছি।’ বিপিএলে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে দুর্দান্ত করছে রংপুর এবং ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী দল গঠনে শিরোপা জয়ের সামর্থ্য রাখে তারা। কিন্তু এখন অবধি মাত্র একটি বিপিএল ট্রফি জিতেছে রংপুর। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পরও গত দুই মৌসুমে প্লে-অফ থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের।
সোহান জানান, প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার যে সমস্যাটি আছে, সেটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, ‘গত দুই বছরে আমাদের শক্তিশালী দল ছিল এবং তারপরও আমরা ট্রফি জিততে পারিনি। নকআউট পর্ব থেকে বিদায়ের আগে আমরা গ্রুপ পর্বে ভালো খেলেছিলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ড্রেসিংরুমে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। সব সতীর্থদের বলেছি আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। এ মৌসুমেও আমরা গ্রুপ পর্বে ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমি তাদের বলেছি আমাদের মূল লক্ষ্য নকআউট পর্বে ভালো খেলা। তাই আমাদের এ ধারাবাহিকতা টুর্নামেন্টজুড়ে ধরে রাখতে হবে।’
গত দুই মৌসুমে, প্লে-অফে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি খেলোয়াড়দের পায়নি রংপুর। তাই প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার এটিই অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন সোহান, ‘সমস্যা হলো, গত দুই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত আমরা একই দল নিয়ে খেলতে পারিনি।
গ্রুপ পর্বে আমাদের একটি নির্দিষ্ট দল ছিল, কিন্তু আমরা যখন প্লে-অফ শুরু করি তখন কিছু খেলোয়াড়ের অন্য প্রতিশ্রুতি থাকায় দল ছেড়ে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ায় দলের মোমেন্টাম নষ্ট হয়।’ তবে এ বছর রংপুর একই দল নিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট খেলবে বলে জানান সোহান। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে যা ঘটেছে এ বছর তা হবে না। এ বছরে আমরা শেষ পর্যন্ত সব বিদেশি খেলোয়াড়দের পাব। এ মৌসুমে আমরা আরো ভালো কিছুর আশা করতে পারি।’
"