ক্রীড়া ডেস্ক
নিয়ম না মানলে আইপিএলে নিষিদ্ধ

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ জেতা ভারতের আত্মবিশ্বাস একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। তিন টেস্ট সিরিজে ভারতকে একেবারেই পাত্তা দেননি টম লাথামরা। বাজে পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো তিন টেস্টের সিরিজে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হয় ভারত। দেশের মাটিতে এমন পারফরম্যান্স নিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া যান বিরাট কোহলি-জসপ্রিত বুমরাহরা।
পার্থে প্রথম টেস্টে জিতলেও পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেভাবে লড়াই-ই করতে পারেনি সফরকারীরা। বাজে ব্যাটিংয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে ভারত। এমন হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ওঠা হয়নি তাদের। টানা দুই সিরিজে এমন পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটারদের নিয়ে কঠোর হচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। দলের মাঝে শৃঙ্খলা, একতা এবং ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে নতুন ১০ নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। বিসিআইয়ের ১০ নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো-
ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা বাধ্যতামূলক : বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো তারকা ক্রিকেটাররা লম্বা সময় ধরেই বিজয় হাজারে ট্রফি কিংবা রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেললেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিয়মিতই খেলতেন তারা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও জাতীয় দলের সাফল্যের কারণে সর্বশেষ কয়েক বছরে চাইলেই ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলে অবসর সময় কাটাতে পারতেন ক্রিকেটাররা। তবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ হারায় সেই নিয়মে লাগাম টানছে বিসিসিআই।
পরিবারের সঙ্গে আলাদা সফর নয় : করোনা ভাইরাসের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মতো লম্বা সফরে পরিবারের উপস্থিতি ক্রিকেটারদের ওপর বাজে প্রভাব ফেলছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকের ধারণা, পরিবার সঙ্গে থাকায় ক্রিকেটাররা ম্যাচ কিংবা অনুশীলনে ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে পারছেন না। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদেশ সফরে পরিবার
অতিরিক্ত লাগেজ বহনে নিষেধাজ্ঞা : বিদেশ সফরে গেলে বেশিরভাগ সময়ই ক্রিকেটাররা বাড়তি ব্যাগেজ নিয়ে দেশে ফেরেন। তবে নতুন নিয়মে সেটাতেও বাধ্যবাধকতা করে দিয়েছে বিসিসিআই। ৩০ দিনের বেশি সময়ের বিদেশি সফরে ২টা কিট ব্যাগ এবং তিনটি স্যুটকেস নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা। তবে সেটার ওজন ১৫০ কেজির বেশি হওয়া যাবে না। সাপোর্ট স্টাফের ক্ষেত্রে সেটা ২টা বড় স্যুটকেস এবং একটি ছোট স্যুটকেস নেওয়ার সুযোগ থাকছে। তবে ৮০ কেজির বেশি বহন করতে পারবেন না তারা।
ব্যক্তিগত স্টাফে বোর্ডের অনুমতি : নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশ সফরে নিজস্ব শেফ নিয়ে যেতেন তারকা ক্রিকেটারররা। শেফের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ম্যানেজার, সহকারী কিংবা নিরাপত্তাকর্মীও নিয়ে যাওয়ার চল ছিল। সেখানেও লাগাম টানছে বিসিসিআই। বোর্ডের অনুমতি পেলেই কেবল ক্রিকেটাররা নিজেদের ব্যক্তিগত স্টাফ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন।
নিজের খরচে বাড়তি সরঞ্জাম : নিজেদের ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যাগগুলো টিম ম্যানেজমেন্টের মতো বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সিলেন্সে (সিওই) পাঠাতে হবে ক্রিকেটারদের। তবে কোনো ক্রিকেটার সেগুলো পৃথকভাবে বহন করতে চাইলে সেটার পুরো খরচ বহন করতে হবে তাদের। সেটার জন্যও অবশ্য সিওই থেকে অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া বাড়তি সরঞ্জাম নিলে সেটার খরচও দিতে হবে ক্রিকেটারদেরই। বিসিসিআই হিসেবের বাইরে কোনো জিনিসের খরচ বহন করবে না।
অনুশীলনের পুরোটা সময়ই থাকতে হবে : দেশের মাটিতে খেলা হলে অনেক সময়ই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অনুশীলনে আসেন এবং তা শেষ হয়ে গেলে নিজেদের মতো আগেই চলে যান। তবে এখন থেকে সেটা করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। নিজেরটা শেষ হলেও পুরো দলের অনুশীলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তাকে।
সিরিজ চলাকালে ব্যক্তিগত শুটিংয়ের অনুমতি নেই : সিরিজ চলাকালীন অনেক সময়ই অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে উপস্থিত হোন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও দেখা যায় তাদের। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন দেশের মাটিতে সিরিজ হলে প্রায়শই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের কাজ করতে দেখা যায় সাকিব আল হাসানকে। ভারতেও এমনটা করতে পারতেন কোহলি-রোহিতরা। তবে এখন থেকে সেটা করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।
আলাদাভাবে পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ করা যাবে না : দেশের মাটিতে খেলা হলে প্রায়ই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অনুশীলনে আসেন ক্রিকেটাররা। তবে এখন থেকে সেটা না করতে পারবেন না তারা। অনুশীলন কিংবা ম্যাচ খেলার জন্য টিম হোটেল থেকে টিম বাসে করেই যেতে হবে। সেইসঙ্গে কোনোভাবেই পরিবার নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যাবে না। বিশেষ প্রয়োজন হলে তাদেরকে আগে থেকেই প্রধান কোচ ও নির্বাচকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।
বিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে থাকতেই হবে : বিভিন্ন সময় আনুষ্ঠানিক শুটিংয়ের পাশাপাশি প্রচারমূলক কাজ করে থাকে বিসিসিআই। এসব ব্যাপারে ক্রিকেটারদের অবগত থাকতে হবে এবং সবাইকে উপস্থিতও থাকতে হবে।
সিরিজ বা সফর শেষের আগে বাড়ি নয় : সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ টেস্টই তিন কিংবা চার দিনে শেষ হয়ে যায়। পুরো সিরিজে খুব কম টেস্টই পাঁচ দিনে যেতে দেখা যায়। এমন অবস্থায় অনেক ক্রিকেটারই ম্যাচ বা সিরিজ শেষ হতেই বাড়ির পথে রওনা হয়ে যান। তবে এখন থেকে এমনটা করতে পারবেন না তারা। সিরিজ বা সফর শেষ হলে আগেভাগে না গিয়ে দলের সঙ্গেই থাকতে হবে তাদের।
নিয়ম না মানলে শাস্তি : বিসিসিআই জানিয়েছে, প্রত্যেক ক্রিকেটার নিয়মগুলো মেনে চলতে বাধ্য। কোনো ক্রিকেটার যদি এগুলো না মেনে চলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলকব্যবস্থা নেবে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। নিয়ম না মানলে আইপিএল খেলায় নিষেধাজ্ঞা, রিটেইনের টাকা কেটে নেওয়া এবং বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার মতো শাস্তিও বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।
"