ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিপিএলে হযবরলের দায় নেবে কে

শুরু থেকেই পরিবর্তনের ডাক, তারপরও প্রশ্ন বিপিএলে আসলে কী চলছে? দারুণ কিছু করার আশ্বাস দিয়ে এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরু করেছিল ফারুক আহমেদের অধীনে নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু আদতে কিছুই বদলায়নি। উল্টো নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। আসর শুরুর আগে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টিই নেয়নি বিসিবি! বর্তমানে বোর্ডের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা সত্যি হতে শুরু করেছে। কারণ বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়রা অভিযোগ করছেন যে তাদের প্রাপ্য টাকা এখনো মেটানো হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে, বুধবারের প্রশিক্ষণ বাতিল করতে বাধ্য হয় দুর্বার রাজশাহী। অংশগ্রহণ না করার হুমকি দিয়েছিল তাদের খেলোয়াড়রা।
এমনকি বৃহস্পতিবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে রাজশাহীর নির্ধারিত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্ধারিত সময়েই এবং সেই ম্যাচে ৬৫ রানে জয়ী হয়ে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে আসে রাজশাহী। রাজশাহীর এক খেলোয়াড় নিশ্চিত করেছেন যে ম্যাচের আগে তিনি তার পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ পেয়েছেন, তবে আরো অনেক খেলোয়াড় থাকতে পারেন যারা এখনো টাকা পাননি।
বিপিএল পরিচালনা কমিটির পেমেন্ট শিডিউল অনুযায়ী, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ, টুর্নামেন্ট চলাকালীন ২৫ শতাংশ এবং বাকি ২৫ শতাংশ টুর্নামেন্ট শেষে পরিশোধ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিই এ সময়সূচি মেনে চলতে পারেনি। জানা গেছে, শুধু ঢাকা ক্যাপিটালস, রংপুর রাইডার্স এবং ফরচুন বরিশাল নিয়মিত পেমেন্ট দিতে সক্ষম হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কিংসের এক খেলোয়াড় জানিয়েছেন যে তাদের ক্যাম্পেও অসন্তোষ বাড়ছে এবং দুদিনের মধ্যে পেমেন্ট না পেলে বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন ক্রিকেটাররা। তবে এ বাজে পরিস্থিতি নিয়ে কেউই দায় নিতে চান না। বিসিবির পরিচালক এবং বিপিএল পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানান, মিডিয়ার মাধ্যমে পেমেন্ট সমস্যার বিষয়ে জানতে পেরেছেন। ফাহিম বলেন, ‘আমরা মিডিয়া থেকে বিষয়টি জেনেছি। আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বুঝিয়েছি এবং তারা পেমেন্ট দেওয়া শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, তারা নিয়ম মেনে পেমেন্ট চালিয়ে যাবে।’ খেলোয়াড়দের পেমেন্ট ইস্যুতে বিসিবির নজরদারিতে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ফাহিম বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে বলেন, ‘যখন পেমেন্ট দেওয়া হবে না, তা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কানে আসবে। রাজশাহীর ক্ষেত্রে যা হয়েছে, আমরা জানার পরই কাজ শুরু করেছি।’ বর্তমানে বিসিবির কোনো স্থায়ী কমিটি না থাকায় বিপিএলও শিথিলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। জানা গেছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি, খেলোয়াড় এবং বোর্ডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিগুলো এখনো বিসিবিতে পাঠানো হয়নি। তবে পুরো পরিস্থিতি যে লজ্জাজনক তা স্বীকার করেছেন ফাহিম, ‘এ ঘটনা আমাদের জন্য এবং পুরো ক্রিকেট সম্প্রদায়ের জন্য বিব্রতকর। এটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষা। ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা এড়াতে আমরা কাজ করব। কিছু কাজ আমাদের করা উচিত ছিল, যেগুলো হয়তো আমরা করিনি। তবে এটাও সত্যি যে, এ আসরটি ভিন্ন এক পরিস্থিতির মধ্যে আয়োজিত হচ্ছে। অনেক বিষয়ে আমরা চাপের মধ্যে ছিলাম।
এদিকে বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ বলেন, ‘যা হচ্ছে ভালো কিছু হচ্ছে না এবং আমরা আমরা গোছানো বিপিএল আয়োজনে ব্যর্থ। টিকিট নিয়ে সংকট, মানুষের চেঁচামেচি; বাংলাদেশের মানুষ কয়জন অনলাইন থেকে টিকিট কিনতে পারে? রিকশাওয়ালা কি অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবে, সে খেলা দেখবে না? আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা তো এখনো ওই স্ট্যান্ডার্ডে এখনো পৌঁছাইনি। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। কালোবাজারি বন্ধ করতে গিয়ে এটা করবেন তো সেই কালোবাজারি বন্ধ করতে পারলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘বিপিএলে ছয় ম্যাচ হওয়ার পর একটা দলের থেকে বলছে তারা (খেলোয়াড়) আর খেলবে না। কারণ তারা প্রাপ্য টাকা পায়নি। এটা তো আমাদের জন্য আসলেই লজ্জাজনক। ব্যাংক গ্যারান্টি কোথায়? বিসিবি কেন ব্যাংক গ্যারান্টি ভাঙিয়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছে না? আমার কথা হচ্ছে বিসিবির বিপিএল গভর্নমেন্ট বডির কাজটা কী তাহলে? একটা টিম করতে মিনিমাম ৮ কোটি টাকা লাগবে। আমার কাছে ৮ কোটি টাকা না থাকলে আমি বিপিএলের টিম কিনব কেন? আমি তো মানুষের আশায় কিনিনি যে, মানুষ আমাকে স্পন্সর দেবে। আপনি তো স্পন্সর পেতেও পারেন, না-ও পেতে পারেন।’
সুজনের বিরক্তি আছে নিজ দল ঢাকা ক্যাপিটালসকে নিয়েও। লিটন, মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, তানজিদদের মতো তারকায় ঠাসা দল অথচ ৮ ম্যাচে মাত্র ১ জয়। যার উত্তর নিজেও খুঁজছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল এ কোচ, ‘এটা স্কুল ক্রিকেট না যে কাউকে বকা দিয়ে শেখানো যাবে। এমন না যে ট্রেনিং কম হয়েছে, সেটাও না। আমি বুঝতে পারছি না আসলে কেন এমন হচ্ছে। ডিপ্রেসড আসলে। আমাদের ফরেন প্লেয়ারের কোয়ালিটি মানসম্মত নয়, না ফাস্ট বোলার না স্পিনার। মোমেন্টামটা ছুটল আর ওইখান থেকে আমরা কামব্যাক করতে পারছি না। প্রতিদিন হারছেন, এখান থেকে মোটিভেট করা যে কতটা কঠিন, আমি জানি আসলে।’
"