ক্রীড়া ডেস্ক
বায়ার্নের গোল উৎসবের রাতে লিভারপুলের ছয়ে ৬
শুরুতে গোল হজমের ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল বায়ার্ন মিউনিখ। দাপুটে পারফরম্যান্সে শাখতার দোনেৎস্ককে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা তৃতীয় জয় পেল ভিনসেন্ট কোম্পানির দল। প্রতিপক্ষের মাঠে গত মঙ্গলবার রাতে ৫-১ গোলে জিতেছে ছয়বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা। কেভিনের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা ফেরান কনরাড লাইমার। টমাস মুলার সফরকারীদের এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করেন ওলিসে। এর মাঝে জালের দেখা পান জামাল মুসিয়ালা। এদিকে দারুণ ছন্দে ছুটে চলার পথে গত সপ্তাহে পাওয়া হোঁচটের ধাক্কা কাটিয়ে উঠল লিভারপুল। জিরোনার চ্যালেঞ্জ সামলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ষষ্ঠ জয় পেল আর্না স্লটের দল। সেইসঙ্গে নিশ্চিত করল অন্তত শেষ ষোলোর প্লে-অফে খেলার টিকেট। স্প্যানিশ ক্লাবটির মাঠে মঙ্গলবার জমজমাট লড়াইটি ১-০ গোলে জিতেছে লিভারপুল। তাদের জয়ের নায়ক মোহাম্মদ সালাহ, দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান গড়ে দেন। ৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে আছে বায়ার্ন। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ২৭ নম্বরে আছে শাখতার। ৬ ম্যাচের শতভাগ সাফল্যে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে লিভারপুল।
চলতি আসরে ছয় ম্যাচে বায়ার্নের চতুর্থ জয় এটি। তাদের আগের তিনটি জয় ছিল ঘরের মাঠে। নিজেদের আঙিনায় শাখতারের শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। পঞ্চম মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো থ্রু বল ধরে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে গোলটি করেন কেভিন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে অবশ্য আর কোনো শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। বায়ার্ন সমতা ফেরায় একাদশ মিনিটে। বক্সে বল ক্লিয়ার করতে পারেনি শাখতারের এক ডিফেন্ডার। ডান পায়ের শটে জালে পাঠান অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার লাইমার।
সপ্তদশ মিনিটে লেরয় সানের শট ঠেকান শাখতার গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে বায়ার্নকে এগিয়ে নেন মুলার। বক্সে মুসিয়ালার পাস পেয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন গত ইউরোর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানো জার্মান ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভালো একটি সুযোগ পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন সানে। ৭০তম মিনিটে সফল স্পট কিকে ব্যবধান বাড়ান ওলিসে। বক্সে শাখতারের ডিফেন্ডার আলার হাতে বল লাগলে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। ৮৭তম মিনিটে ছয় গজ বক্সের বাইরে থেকে গোলে স্কোরলাইন ৪-১ করেন মুসিয়ালা। আর যোগ করা সময়ে নজরকাড়া গোলে স্বাগতিকদের কফিনে পঞ্চম পেরেক ঠুকে দেন ওলিসে। দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে আরো একজনের বাধা এড়িয়ে গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ না দিয়ে জালে পাঠান ২২ বছর বয়সি উইঙ্গার।
এদিকে টানা জয়ের ধারার মাঝে গত বুধবার প্রিমিয়ার লিগে অপ্রত্যাশিতভাবে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মাঠে ৩-৩ ড্র করে লিভারপুল। সেই হতাশা পেছনে ফেলার লড়াইয়ে জিরোনার আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে পড়ে তারা, তবে মনোবল দৃঢ় রেখে জয় তুলে নেয় ছয়বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা। প্রতিপক্ষের ওপর শুরুর কয়েক মিনিটে একচেটিয়া চাপ তৈরি করে লিভারপুল। সপ্তম মিনিটে এগিয়েও যেতে পারতো তারা; তবে দারউইন নুনেসের কোনাকুনি শট দৃঢ়তায় রুখে দেন গোলরক্ষক।প্রথম ১০ মিনিটে নিজেদের সীমানা থেকে সেভাবে বের হতেই পারেনি জিরোনা। লিভারপুলের রক্ষণের দুর্বলতায় তারাই কিনা পরপর দুই মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করে, যদিও নিজেদের ব্যর্থতায় সফল হতে পারেনি তারা। দ্বাদশ মিনিটে ডালে ব্লিন্ড ছয় গজ বক্সের মুখে ফাঁকায় বল পেয়ে শট নিতেই পারেননি, ওই বল ধরে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো ফ্রান্সেস। পরের মিনিটে আবারও বড় বিপদে পড়তে পারতো লিভারপুল। কিন্তু এবার সামনে গোলরক্ষককে একা পেয়ে বক্সের মুখে শট নেওয়ার আগে পিছলে যান ব্রায়ান গিল, এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ওঠে কোনোমতে শট নিলেও চোট কাটিয়ে ফেরা আলিসন সহজেই রুখে দেন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে লড়াই জমে জমে ওঠে দারুণ। ৩৫তম মিনিটে উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড নুনেসের আরেকটি কোনাকুনি শট পা দিয়ে আটকান পাউলো গাসসানিগা। দুই মিনিট পর জিরোনার মিডফিল্ডার ইয়াসের আসপ্রিয়ার বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট ঝাঁপিয়ে বাইরে পাঠান আলিসন। বিরতির পরও একই গতিতে চলমান লড়াইয়ে ৬৪তম মিনিটে ভাঙে ডেডলক। বক্সে লুইস দিয়াস ফাউলের শিকার হলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সালাহর সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায় লিভারপুল। ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টে গোলের ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূর্ণ হলো মিশরের এই ফরোয়ার্ডের।
এরপর খেলার গতি বেশ কমে যায়। গোল শোধের জন্য জিরোনা মরিয়া হয়ে উঠতে পারেনি। উল্টো ৮৪তম মিনিটে আরেকটি গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করে সফরকারীরা; তবে ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের দারুণ ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান গাসসানিগা। গোল হজমের আগ পর্যন্ত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা জিরোনা বাকি সময়ে বলতে গেলে কিছুই করতে পারেনি। সমান ছয় ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী জিরোনা ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে ৩০ নম্বরে।
"