ক্রীড়া প্রতিবেদক
ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিলেন জ্যোতি
দলের পারফরম্যান্স তো ভুলে যাওয়ার মতোই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও দুঃসহ হয়ে থাকবে নিগার সুলতানার জন্য। একদমই ঘুমিয়ে ছিল তার ব্যাট। দুঃস্বপ্নের মতো সিরিজ কাটিয়ে আত্মোপলব্ধিও আছে বাংলাদেশ অধিনায়কের। দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পেছনে নিজের ব্যর্থতার দায় সবটুকুই নিচ্ছেন তিনি।
মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশ উল্টো স্বাদ পেয়েছে সিলেটে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের নিগারের দল হেরে গেছে ৩-০ ব্যবধানে। এ ৩ ম্যাচে অধিনায়কের মোট রান ১৮। ৩ ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এর চেয়ে বাজে সিরিজ তার ক্যারিয়রে আছে আর কেবল একটি। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩ ম্যাচে করেছিলেন ১০ রান।
এবার প্রথম ম্যাচে নিগার যখন ক্রিজে যান, শতরানের শুরুর পর দারুণ এক জয়ের ভালো সম্ভাবনা ছিল তখন দলের। কিন্তু তিনি আউট হয়ে যান ৪ রান করে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৩৪। রান রেটের চাপ ততটা ছিল না। নিগার নিজের সহজাত ব্যাটিং করতে পারলে দলের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যেত অনেকটাই। কিন্তু এবার বিদায় নেন তিনি ৮ রানে। শেষ ম্যাচে গত সোমবার যখন তিনি ব্যাটিংয়ে নামেন, দল তখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। কিন্তু নিগার মেটাতে পারেননি পরিস্থিতির দাবি। উল্টো ১৬ বলে ৮ রান করে দলকে চাপে ফেলেন বেশ। সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অকপটেই নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
আমরা যারা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছি, তাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। যেমন আমি পুরো টুর্নামেন্টে কোনো রান করতে পারিনি। আমি বলব যে, আমার দিক থেকে আমি ব্যর্থ। কারণ টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে আমার কাছ থেকে সবাই অনেক বেশি প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমি কোনোটিতেই অবদান রাখতে পারিনি, যে কারণে দল অনেকটা পিছিয়ে গেছে।
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগ একসঙ্গে গাঁথতে না পারায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে দল মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মনে করেন নিগার। তিনটি বিভাগে সম্মিলিতভাবে ভালো করতে পারছি না। দেখা যাচ্ছে যে, বোলিং-ফিল্ডিং ভালো হলে ব্যাটিং করতে পারছি না। ব্যাটিং ভালো হলে বোলিং-ফিল্ডিং হচ্ছে না। আজকের ম্যাচটিও তো হাতে ছিল। বোলাররা দুর্দান্ত বল করেছে, ফিল্ডাররা সাপোর্ট করেছে। কিন্তু আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ছেড়েছি। এসব সময়গুলোতে নার্ভ ঠিক রেখে কীভাবে নিজেদের মেলে ধরা যায়, সেটা আরেকটু ভাবা উচিত।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং খুব ভালো হয়নি। ১৬৯ রানের পুঁজি গড়ে আয়ারল্যান্ড। রান তাড়ায় দুই ওপেনার শতরানের জুটি গড়ার পর পথ হারায় দল। পরের ম্যাচে বোলাররা ভালো বোলিং করে আইরিশদের আটকে রাখে ১৩৪ রানে। কিন্তু এবার ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ গোটা দল। শেষ ম্যাচে ব্যাটাররা আবারো বড় স্কোরের আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত আটকে যান ১২৩ রানে। বোলারদের সৌজন্যে সেখান থেকেও জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল দল। কিন্তু শেষ ওভারে বাজে ফিল্ডিংয়ে শেষ আশাও শেষ হয়ে যায়।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতা অবশ্য শুধু এ সিরিজেই নয়, গোটা বছরই ছিল এ দুরবস্থা। এ বছর ১৯ ম্যাচ খেলে নিগারদের জয় কেবল ৩টি। সেই জয়গুলো এসেছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়াটা তবু বোধগম্য ছিল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এভাবে উড়ে যাওয়াটা চরম বিব্রতকর। নিগার অবশ্য প্রতিপক্ষকেই কৃতিত্ব দিয়ে তাদের কাছ থেকে শেখার কথা বললেন। আয়ারল্যান্ড খুব ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে। টুর্নামেন্টজুড়ে তারা আমাদের ভালো শিক্ষা দিয়েছে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কীভাবে খেলা উচিত। টি-টোয়েন্টি সিরিজটি মিরপুরে হলে ফল অন্যরকম হতো, এরকম বিশ্বাস করার লোকের অভাব নেই। সিলেটে এ বছর ৮ টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ হেরে গেল সবকটিই। তবে ভেন্যু বা এ মাঠের উইকেট নিয়ে অভিযোগ-আপত্তি নেই নিগারের। বরং টিম ম্যানেজমেন্টকে তিনি তাগিদ দিলেন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন ক্রিকেটার বাছাই করতে। উইকেট তো এখানে অনেক ভালো। সিলেটের উইকেট অনেক ভালো। আয়ারল্যান্ড তো ভালো ক্রিকেট খেলল। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি বলে জিততে পারিনি। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল হিসেবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ম্যানেজমেন্ট থেকেও নতুন পরিকল্পনা বের করে আনতে হবে যেকোনো ক্রিকেটাররা এসব চাপের মুহূর্ত সামলাতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোথায় আমরা আরেকটু ভালো সামলাতে পারতাম। নিগারদের পরের চ্যালেঞ্জ আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
"