ক্রীড়া প্রতিবেদক
নাটকীয়তায় হোয়াইটওয়াশ জ্যোতিরা
জয়ের জন্য ৫ বলে তখন আয়ারল্যান্ডের প্রয়োজন ১৪ রান। স্বর্ণা আক্তারের ফুলটস বলে টাইমিং করতে পারলেন না লরা ডেলানি। কিন্তু লং অফে সহজ ক্যাচ নিতে পারলেন না রিতু মনি। উল্টো রান হলো ২টি। পরের ২ বলে দারুণ ২টি শটে ৪ মারলেন জীবন পাওয়া সেই ডেলানি। বাংলাদেশের সুযোগ এলো আরেকটি। ২ বলে যখন প্রয়োজন ৪ রান, আবার ডেলানির টাইমিংয়ে গড়বড়। কিন্তু লং অফে এবার বলের ফ্লাইট বুঝতে পারলেন না জান্নাতুল ফেরদৌস। যেটি হওয়ার কথা আউট, সেটিই ফিল্ডারের পেছন দিয়ে হয়ে গেল ৪। ম্যাচটাও বেরিয়ে গেল বাংলাদেশের মুঠো থেকে। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল আয়ারল্যান্ড।
আইরিশদের জন্য এটি মধুর এক প্রতিশোধও। মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারা, সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল সোমবার যথারীতি বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। যে দলের রান ছুটছিল দেড়শ’র পথে, শেষদিকে পথ হারিয়ে সেই দল আটকে যায় স্রেফ ১২৩ রানে। রান তাড়ায় একসময় অনায়াসেই এগোচ্ছিল আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ পরে ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। কিন্তু শেষ ওভারে ২টি ক্যাচ হাতছাড়া করলে ম্যাচও বেরিয়ে যায়।
শেষ ওভারে আয়ারল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। নারী ক্রিকেটের বাস্তবতায় কাজটা খুবই কঠিন। আগের ২ ওভারে ৯ রান দেওয়া লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার স্বর্ণার ওপর শেষের ভার দেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। প্রথম বলে দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান আর্লিন কেলি। পরের বলে জীবন পেয়ে ২টি রানও পান ডেলানি। তৃতীয় বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বোলারের মাথায় ওপর দিয়ে ৪ মারেন তিনি। পরের বলটি আবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দারুণ শটে কাভার দিয়ে ৪ মারেন অভিজ্ঞ এ আইরিশ ব্যাটার।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা জিইয়ে ছিল এরপরও। কিন্তু পঞ্চম বলে আবার জীবন পেয়ে ডেলানির বাউন্ডারিতে নাটকীয় জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে আইরিশরা। ওই ডেলিভারির আগে লং অফ থেকে রিতু মনিকে সরিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে আনা হয়। ক্যাচ নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে খেলা এ ক্রিকেটারও। আইরিশদের রানতাড়ার শুরুটাও ছিল দারুণ। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৭ রান তোলে এমি হান্টার ও গ্যাবি লুইস।
২৪ বলে ২৮ রান করে হান্টারের বিদায়ে ভাঙে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। পরের ওভারে আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি লুইসকে বিদায় করেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান।
এরপর রান আটকে ও দ্রুত আরো উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা লিয়া পল এবার শূন্যতেই রানআউট হন মুর্শিদা খাতুনের থ্রোয়ে। আইরিশদের বড় ভরসা ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট ১১ রান করে সীমানায় ধরা পড়েন রাবেয়ার বলে। ১৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ডেলানি ও রেবেকা স্টোকেল সেখান থেকে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন কিছুটা। তবে রান রেটের চাপ বাড়ছিলই। ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২১ রান, নাহিদার বলে বোল্ড হয়ে যান স্টোকেল। ১৯ রান করতে ২২ বল খেলেন তিনি। নাহিদার ওই ওভার থেকে আসে কেবল ৬ রান। বাংলাদেশ তখন প্রবলভাবেই ফেভারিট। কিন্তু শেষ ওভারে ডেলানির দারুণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজে ক্যাচিংয়ে কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে আইরিশরা।
ম্যাচের প্রথমভাগেও এমন হতাশার গল্প আছে বাংলাদেশের। শুরুটা যদিও ছিল আশা জাগানিয়া। উদ্বোধনী জুটিতে ৪ ওভারে ৩৩ রান তোলেন সোবহানা মোস্তারি ও মুর্শিদা খাতুন।
১২ বলে ১২ করে মুর্শিদা আউট হওয়ার পর দারুণ এক জুটি গড়েন সোবহানা ও শারমিন আক্তার। ফর্মে থাকা দুই ব্যাটার যোগ করেন ৫৮ বলে ৭১ রান। ১১ ওভারে দলের রান ছিল ৮৭। এরপর একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েন দুই ব্যাটার।
তারপরও দেড়শ’ রানের পথে ছিল বাংলাদেশ। চতুর্দশ ওভারে শারমিন স্ট্যাম্পড হন ৩৩ বলে ৩৪ রান করে। একটু পর টানা ৪ বলে রান না করতে পেরে শেষ পর্যন্ত সোবহানা আউট হন ৪৩ বলে ৪৫ রান করে।
পরের দিকের কোনো ব্যাটার পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। ১৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ পারেনি ১২৫ রান করতেও।
তারপরও ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারলে রক্ষা করবে কে!
"