ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিপিএলের মাসকট উন্মোচন

নতুন বাংলাদেশ গড়তে ‘তারুণ্যের উৎসব’

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা বলছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাশেই দাঁড়ানো জাহানারা আলম, সালমা খাতুন। একদল শিক্ষার্থী তাদের কাছে এসে আবদার করল ছবি তোলার। সেই পর্ব চলার সময়ই সেখানে হাজির নাজমুল হোসেন শান্ত। শিক্ষার্থীরা ছুটল শান্তর দিকে। পরে যখন এলেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম, আরো সাড়া পড়ে গেল।

ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল সকালের দৃশ্য এটি। তামিম, মুশফিক, নিগার, জাহানারাদের পাশাপাশি জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক তপু বর্মণ, টেবিল টেনিসের রানি জোবেরা রহমান, দক্ষিণ এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসের ভারোত্তোলনে স্বর্ণপদকজয়ী মাবিয়া আক্তারসহ আরো তারকার উপস্থিতিতে চারপাশ যেন ঝলমল করছিল। তাদের এত কাছে পেয়ে অভিভূত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।

আয়োজনটিও মূলত তরুণদের জন্যই। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আয়োজনের ঘোষণা করেন।

তারুণ্যের উৎসবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে এবারের বিপিএল দিয়ে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর শুরু বিপিএলের নতুন আসর।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ ১২টির বেশি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রায় ২ মাস ধরে চলবে এই তারুণ্যের উৎসব। ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, অ্যাথলেটিকস ও বাস্কেটবলের নানান আয়োজন থাকছে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হতে যাওয়া এ তারুণ্যের উৎসবে। গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ছাপ থাকবে এ আয়োজনের পরতে পরতে। তারুণ্যের উৎসবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ হিরুজ্জামানের স্বাগত বক্তব্য শেষে বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মর্মস্পর্শী প্রামাণ্যচিত্র। পরে আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের স্মরণে পালন করা হয় ১ মিনিটের নীরবতা।

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে একদম শেষে উন্মোচন করা হয় বিপিএলের ১১তম আসরের মাসকট ও থিম সং। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আগের দশ আসরে ছিল না কোনো মাসকট। নতুন আসরে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মাসকটের নাম রাখা হয়েছে ‘ডানা ৩৬’। যা মূলত ডানা প্রসারিত করা একটি সাদা পায়রা।

মাসকটের নামের ডানা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। গত জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের স্মরণীয় ৩৬ দিনের জন্য মাসকটের দুই পাশে ১৮টি করে রাখা হয়েছে মোট ৩৬টি রঙিন পালক। যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ, উদ্যমী, অপ্রতিরোধ্য তরুণকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

প্রথমবারের মতো মাসকট ব্যবহারের পাশাপাশি থিম সংও তৈরি করা হয়েছে বিপিএলের জন্য। বিসিবি সভাপতি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রদত্ত মূল শব্দমালা ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানকে ধারণ করে তৈরি করা হয়েছে সেই থিম সং। তারুণ্যের উৎসবের প্রতিপাদ্যও এই স্লোগান।

বিপিএলে এবার আসরজুড়েই থাকছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ছাপ। মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য থাকবে বিনামূল্যে পানির ব্যবস্থা। আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া মীর মুগ্ধের নামে ‘শহীদ মুগ্ধ কর্নার’ থেকে বিনামূল্যে পানি পান করতে পারবেন দর্শকরা। সেখানে থাকা কিউ আর কোডের মাধ্যমে জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানও দিতে পারবেন ইচ্ছুক যে কেউ। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ ও রিসাইক্লিংয়ের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি ভেন্যুতে থাকবে বর্জ্যশূন্য জোন। যেখানে প্রচার করা হবে বর্জ্যশূন্যতার উপকারিতা। পাশাপাশি দর্শকদের ভোগান্তি কমাতে বিপিএলের সব টিকেট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করার চেষ্টাও করছে বিসিবি।

ক্রিকেটপ্রেমীদের পাশাপাশি সারাদেশের আপামর মানুষের মাঝে তারুণ্যের উৎসব ছড়িয়ে দিতে বিপিএলের তিন ভেন্যু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ‘মিউজিক ফেস্ট’ নামে আয়োজন করা হবে তিনটি কনসার্ট। এর বাইরে আরো কিছু চমকের আভাসও দিয়ে রাখেন বিসিবি প্রধান।

পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ এক বিশদ উপস্থাপনায় তারুণ্যের উৎসবের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দেন।

বিপিএল চলাকালে প্রতি শুক্র ও শনিবার একটি করে ছেলেদের মোট ৮টি ও মেয়েদের ৮টি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হবে।

এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৫ ন্যাশনাল কাপের আয়োজন করা হবে। পরে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে পর্দা নামবে তারুণ্যের উৎসবের।

ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে প্রতিভা অন্বেষণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, স্কিল প্রতিযোগিতা ও জুলাই-৩৬ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া যুব ও উদ্যোক্তা সমাবেশ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন কর্মশালা, জনসচেতনতাবিষয়ক কার্যক্রম, আর্ট গ্যালারিতে জুলাই বিপ্লবের চিত্র প্রদর্শনী, অনুদান ও বৃত্তি প্রদান, বর্জ্যশূন্যতা প্রচারে চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার প্রদান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পেইন, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টিবিষয়ক অলিম্পিয়াডসহ থাকছে আরো বেশকিছু আয়োজন।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তারুণ্যের উৎসবের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বার্তা দেন আসিফ মাহমুদ।

‘খেলাধুলা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। বিশেষ করে ক্রিকেট সবসময়ই আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। ভিন্ন ক্ষেত্রে যত মতবিরোধই থাকুক, খেলার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই। জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে দেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে এগিয়ে যাওয়াই এ তারুণ্যের উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য।’ প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে উন্মোচিত হয় বিপিএলের মাসকট ও থিম সং।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close