ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

হার এড়াতে লড়ছে বাংলাদেশ

দিনের শেষ দিকে বেশ এক চোট লেগে গেল তাসকিন আহমেদ ও আলজারি জোসেফের মধ্যে। বেশ আগ্রাসী শরীরী ভাষায় পরস্পরের দিকে এগিয়ে গেলেন দুজন। অগ্নিদৃষ্টি বিনিময়, কথার শাসানি খানিকটা হলো। জোসেফ তো যেন রাগে ফুঁসছিলেন! মেজাজ অবশ্য এমনিতেও খারাপ হওয়ার কথা তার ও তাদের। যে বাংলাদেশের রান দুইশ হওয়া নিয়েই একপর্যায়ে ছিল টানাটানি, সে দল আড়াইশ ছাড়িয়ে ফলো-অন এড়াল তো বটেই, নিজেদের ইনিংস টেনে নিল চতুর্থ দিনে।

ম্যাচে অবশ্য এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজই এগিয়ে। নিষ্প্রাণ উইকেটে বেশ কার্যকর বোলিং করেছেন আলজারি জোসেফ ও তার সতীর্থরা। তবে বিপর্যয়ের পর লড়াই করে ম্যাচ বাঁচানোর কিছুটা সম্ভাবনা জাগাতে পেরেছে বাংলাদেশ। অ্যান্টিগার টেস্টের তৃতীয় দিনে ২ উইকেটে ২০ রান নিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে।

ক্যারিবিয়ানরা এগিয়ে আছে ১৮১ রানে। ক্রিজে আছে বাংলাদেশের শেষ জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল একজনের, আরো দুজনের ছিল ৯০ ছোঁয়া ইনিংস। এজন্যই ৪৫০ রানের সংগ্রহ গড়তে পেরেছে দল। বাংলাদেশের কেউ পারেননি তেমন কিছু করতে। সাতজন ব্যাটসম্যান ১৫ ছুঁয়েও ফিফটিতে যেতে পারেন কেবল দুজন। সেই দুজনও বিদায় নেন ফিফটির পরপরই। সম্মিলিত চেষ্টায় কেবল ফলো-অন এড়ানো গেছে। ১১৬ বল খেলে ৫০ রানে আউট হয়েছেন মুমিনুল। ইনিংসটির পথে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

শাহাদাত হোসেন, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজরা ইনিংস বড় করতে না পারায় ১৬৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দলকে ফলো-অন এড়ানোর কাছে নিয়ে যায় জাকের আলি ও তাইজুল ইসলামের জুটি। সপ্তম উইকেটে ৬৮ রান যোগ করেন দুজন, ইনিংসের যা সর্বোচ্চ জুটি। গত মাসে অভিষেক টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিফটির পর চোটের কারণে সিরিজের পরের টেস্ট খেলতে পারেননি জাকের। এবার দলে ফিরে তিনি আবার লড়িয়ে একটি ফিফটি উপহার দিলেন নিজের দ্বিতীয় টেস্টেও।

অ্যান্টিগায় আগের দুই সফরে যেরকম পেস-সহায়ক ভয়ংকর উইকেট দেখেছে বাংলাদেশ, এবারের উইকেট অনেকটাই ভিন্ন। প্রথম দিনের পর উইকেটে বোলারদের সহায়তা খুব একটা ছিল না। রবিবার তৃতীয় দিনে বোলারদের জন্য বলতে গেলে কিছুই ছিল না সেখানে। ক্যারিবিয়ান পেসারদের তাই কৃতিত্বই প্রাপ্য। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ও শাহাদাত হোসেন সকালে সাবধানি ব্যাটিংয়ে শুরু করেন আবার। দিনের প্রথম পাঁচ ওভারে রান আসে ছয়। পরের সময়টাতেও দুজন ছিলেন বেশ সতর্ক। দিনের প্রথম ঘণ্টা প্রায় নির্বিঘ্নে পার করেই দিচ্ছিলেন দুজন। তবে আউট সুইঙ্গারে শাহাদাতকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন কিমার রোচ। ৭১ বলে ১৮ রান করা ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন স্লিপে।

সেই জুটি ৪৫ রানে থামার পর একই রকম বন্ধন গড়ে তোলেন মুমিনুল ও লিটন কুমার দাস। দুজনের দৃঢ়তায় প্রথম সেশনে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ক্রিজে যাওয়ার পর থেকেই বেশ স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন লিটন। লাঞ্চের পরপরই মুমিনুল পঞ্চাশে পা রাখেন ১১৫ বল খেলে। তবে থেমে যান তিনি সেখানেই। নতুন স্পেলের প্রথম ডেলিভারিতেই তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন জেডেন সিলস। এই নিয়ে এ বছর তিন দফায় তিনি আউট হলেন ঠিক ৫০ রানে। লিটনের সঙ্গে তার জুটি ভাঙে ৬২ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজ ক্রিজে যাওয়ার পরই শর্ট বলের তোপের সামনে পড়েন। কোনোটি তার গায়ে লাগে, কোনোটি ব্যাটের নানা কোনায়। কিন্তু কোনো রকমে ক্রিজ আঁকড়ে রাখেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

লিটন শর্ট বলের জবাব দেন দারুণ কয়েকটি পুল শটে। তবে তিন ঘণ্টার বেশি ক্রিজে কাটিয়ে তার সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ পর্যন্ত থামে শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতেই। পুল করার চেষ্টায় বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি ৭৬ বলে ৪০ রান করে। আলজারি জোসেফের শর্ট বলের স্রোত থেকে নিজেকে একটা সময় আর রক্ষা করতে পারেননি মিরাজও (২৩)। দুইশ রানকে তখন মনে হচ্ছিল বেশ দূরের পথ। দারুণ লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দলকে আরো এগিয়ে নেন জাকের ও তাইজুল।

দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার আশা ছিল ক্যারিবিয়ানদের। উল্টো জাকের ও তাইজুল দারুণ কিছু শট খেলে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন। নতুন বল নেওয়ার পর রান আসতে থাকে ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ করে। জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। জাকের পৌঁছে যান নিজের পঞ্চাশে। তাইজুলকে ২৫ রানে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক হলে বোল্ড করে জুটি ভেঙে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বস্তি ফেরান আলজারি জোসেফ। একটু পর জাস্টিন গ্রেভসকে উড়িয়ে মেরে সিলসের দারুণ ক্যাচে শেষ হয় জাকের আলির ইনিংস। বাংলাদেশের ইনিংস অবশ্য শেষ হয়নি। জাকেরকে থামানোর পর গ্রেভস বিদায় করেন হাসান মাহমুদকে। তবে শেষ জুটিতে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম বেশ এলোমেলো ব্যাট চালিয়েও আউট হননি। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয় ১২ ওভার আগে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close